বিল বকেয়া বহু দিন, বিক্ষোভ ঠিকাদারদের

বকেয়া মেটানোর দাবি জানিয়ে সোমবার কুলটি পুরসভায় দিনভর বিক্ষোভ দেখালেন পুরসভার ঠিকাদারেরা। পুরপ্রধানকে বিক্ষোভ দেখানো ছাড়াও অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মীদের দফতর থেকে বের করে দরজায় তালা দিয়ে দিলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার কাছে তাঁদের কোটি কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। বর্তমান পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা বাকি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:০২
Share:

তালা পুরসভার দফতরে। —নিজস্ব চিত্র।

বকেয়া মেটানোর দাবি জানিয়ে সোমবার কুলটি পুরসভায় দিনভর বিক্ষোভ দেখালেন পুরসভার ঠিকাদারেরা। পুরপ্রধানকে বিক্ষোভ দেখানো ছাড়াও অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মীদের দফতর থেকে বের করে দরজায় তালা দিয়ে দিলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার কাছে তাঁদের কোটি কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। বর্তমান পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা বাকি। অথচ, পুর কর্তৃপক্ষ তাঁদের বকেয়া মেটানোয় উদ্যোগী হচ্ছেন না। পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বকেয়া মেটানোর কোনও আশ্বাসই দিতে পারেননি। পুরো বিষয়টি শোনার পরে বকেয়ার পরিমাণ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস।

Advertisement

বকেয়া নিয়ে কুলটির ঠিকাদারদের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। কিন্তু এত দিন প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি। সোমবার কিছু ঠিকাদার পুরপ্রধানের দফতরে গিয়ে বকেয়া মেটানোর দাবি জানান। কিন্তু পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবু জানান, সকলের বকেয়া মেটানো সম্ভব নয়। এর পরেই ঠিকাদারেরা অ্যাকাউন্টস দফতরে গিয়ে কর্মীদের বের করে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা পুরপ্রধানকে জানিয়ে দেন, বকেয়া মেটানো না হলে দফতরের কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। কর্মীরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন। দিনভর তালা খোলেননি ঠিকাদারেরা।

বিক্ষোভকারী ঠিকাদারদের অভিযোগ, পাঁচ বছর ধরে পুরসভা থেকে বরাত নিয়ে একের পর এক কাজ করেছেন। কিন্তু বিল মেটানো হয়েছে যৎসামান্য। তাঁদের দাবি, পুরসভার কাছে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে তাঁদের। ঘরের সোনাদানা বন্ধক রেখে বরাত পাওয়া কাজ করেছেন। পুর কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছিলেন, প্রত্যেকের বকেয়া মেটানো হবে। কিন্তু বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ ফুরোনোর মুখেও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই বলে তাঁদের অভিযোগ।

Advertisement

কুলটি পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৬ জুলাই। মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুরিয়া পুরসভাকে আসানসোল পুরসভার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। তাই ১৭ জুলাই থেকে কুলটি পুরসভায় প্রশাসক বসাচ্ছে প্রশাসন। ঠিকাদারদের আশঙ্কা, প্রশাসক বসলে তাঁরা আর বকেয়া পাবেন না। এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীনই পুরসভা ছেড়ে চলে যান পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবু। এর পরে ঠিকাদারেরা উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়কে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বাচ্চুবাবু অবশ্য ঠিকাদারদের পক্ষ নেন। তাঁর অভিযোগ, “ঠিকাদারদের প্রায় ২৫ কোটি টাকা বাকি আছে। উজ্জ্বলবাবু কার্যত এই ক’বছর পুরসভায় একনায়কতন্ত্র চালিয়েছেন। সরকার কত টাকা পাঠিয়েছে, কত টাকা তিনি ঠিকাদারদের দিয়েছেন, তা আমাদের জানাননি।” বাচ্চুবাবুর আরও দাবি, গত দেড় বছর বোর্ডসভা হয়নি। আয়-ব্যয়ের বাজেট পাশ হয়নি। কোনও কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সরকারি তহবিলের টাকা একতরফা ভাবে খরচ করা হয়েছে।

পুরসভায় ঠিকাদারদের এই বকেয়ার পরিমাণ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস। তিনি জানান, সরকারি তহবিল থেকে কত টাকা অনুদান আসছে তা জেনেই তো পুরসভার তরফে বরাত দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে অনুদানের তুলনায় বেশি টাকার কাজ করানো হল কী ভাবে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবুর অবশ্য সাফ বক্তব্য, “সরকার থেকে যে টাকা এসেছে, তা দিয়ে সমস্ত ঠিকাদারের টাকা মেটানো যাবে না। বিক্ষোভ দেখালেও আমার কিছু করার নেই।” তিনি জানান, ঠিকাদারদের প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা বাকি আছে। সরকার থেকে এসেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সরকারের নির্দেশ এসেছে প্রকল্প বহির্ভূত কোনও কাজের বিল মেটানো যাবে না। উজ্জ্বলবাবুর দাবি, ঠিকাদারদের অনেকেরই কাজ প্রকল্পের বাইরে করা হয়েছে। কিন্তু তা ঠিকাদারেরা কার নির্দেশে করেছেন, সে প্রশ্নের উত্তর উজ্জ্বলবাবু দিতে চাননি। বাচ্চুবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে পুরপ্রধানের বক্তব্য, “কোন প্রকল্পে কী টাকা খরচ হবে, কী ভাবে কাজ হবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব তো আমারই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement