খন্দে পড়ে বিপাকে যানবাহন। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
ঘিঞ্জি শহরকে যানজট মুক্ত করতে ভোটের আগে গড়া হয়েছিল বাইপাস। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তা বেহাল। তার পরে প্রায় ন’বছর পেরিয়ে গেলেও রানিগঞ্জ বাইপাস মেরামতি হয়নি। এই রাস্তা সংস্কারের দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ থেকে বণিক সংগঠন, সকলেই। লোকসভা ভোট মিটলেই কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বাস আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার (এডিডিএ)।
দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম পুরনো পাইকারি বাজার খনি শহর রানিগঞ্জে। সে কারণে যানবাহনের আনাগোনা বেশি। ২০০৩ সালে শহরের মূল পথ নেতাজি সুভাষ বসু রাস্তাকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই বাইপাসের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বিকাশ চৌধুরীর মৃত্যুর পরে যে উপ-নির্বাচন হয় তাতে এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরী সিপিএমের প্রার্থী হন। ভোটের আগে তড়িঘড়ি গির্জা মোড় থেকে রানিসায়র পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার বাইপাস রাস্তা তৈরি করা হয়। অভিযোগ, এই কাজে এডিডিএ-র প্রায় কোটি টাকা খরচ হলেও সমস্যা কার্যত মেটেনি। তিন মাসের মধ্যে ভেঙেচুরে যায় রাস্তা। তার পরে যত বারই ভোট এসেছে, এই বাইপাস নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ আর শাসক দলের প্রতিশ্রুতি শুনেছেন বাসিন্দারা। কাজের কাজ কিছু হয়নি। ভারী যান চলাচল অসম্ভব এই রাস্তায়। এলাকাবাসীর কাছে এই বাইপাস শুধু সংযোগকারী রাস্তা হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। ফলে, সমাধানের বদলে যানজট সমস্যা রানিগঞ্জে বেড়েছে দিনের পর দিন।
রানিগঞ্জ বনিক সংগঠনের তরফে রাজু খেতান জানান, তাঁরা শহরের নাগরিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে শহরের প্রধান রাস্তার পাশে বাইপাসের দাবিতে ধর্নায় বসতে চেয়েছিলেন। জানুয়ারিতে রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটক তাঁদের ধর্নায় না বসার অনুরোধ জানান। রাজুবাবুর দাবি, “মলয়বাবু চিঠি দিয়ে জানান, পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। তবে এ বার প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে জোরদার আন্দোলনে নামব বলে আমরা মন্ত্রীকে জানিয়েছি।” তাঁদের দাবি, শুধু রাস্তা সংস্কার করলেই হবে না। ওই রাস্তায় একটি রেল টানেল পার হতে হয়। সেখানে উড়ালপুল প্রয়োজন। তা ছাড়া ২০ চাকার মতো বড় কোনও গাড়ি নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে। সে কারণে তড়িঘড়ি তৈরি হওয়া বাইপাস কার্যত চালুই করা যায়নি। এর ফলস্বরূপ শহরে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।
রানিগঞ্জ নাগরিক সংগঠনের সভাপতি রামদুলাল বসু জানান, বিধি অনুযায়ী কোনও শহরের ভিতর দিয়ে জাতীয় সড়ক যেতে পারে না। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই শহরের প্রধান রাস্তাকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের অংশ হিসেবে ঘোষণার সময়েই বাইবাস নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। এখন প্রশাসনের তরফে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে দাবি তাঁর।
তৃণমূল নেতা গোপাল আচার্য আবার অভিযোগ করেন, শহরের ভিতরে সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা জবরদখল হয়ে রয়েছে। দখলমুক্ত করার দায়িত্ব পুরসভার। কিন্তু তারা সে কাজ করেনি। তাঁর দাবি, শহরের ব্যস্ততম রাস্তা সিআর রোড থেকে হকারদের তুলে অদূরে একটি পার্কের পাশে বসার জায়গা দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু কিছু দিন পরে দেখা যায়, নতুন হকারেরা রাস্তার পাশের জায়গা দখল করে বসেছে। গোপালবাবুর আরও অভিযোগ, “বাইপাস নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছিল। কারণ, এই ৬ কিলোমিটার রাস্তার অর্ধেকের বেশি বহুকাল ধরে পিচেরই ছিল। সেখানে কোনও সংস্কার কাজ হয়নি। রেললাইন লাগোয়া যেটুকু অংশে কাজ হয়েছে, তাতে প্রায় কোটি টাকা খরচ হওয়া সম্ভব নয়।” এ নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে তাঁর দাবি।
এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা এ বার আসানসোলের সিপিএম প্রার্থী বংশগোপালবাবু এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে তাঁর দাবি, “বিধানসভা ভোটের আগে আমরা এডিডিএ থেকে ৮৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছিলাম। ভোটের পরে নতুন সরকার কেন সে কাজ করেনি, বলতে পারব না।” এডিডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান নিখিল বন্দোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “বংশগোপালবাবুরা আদৌ সংস্কারের কোনও পরিকল্পনা নিয়েছিলেন কি না, জানা নেই। তবে আমরা একটি পরিকল্পনা নিয়েছি। লোকসভা ভোটের পরেই কাজ শুরু হবে।”