বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ইস্তাহারে জমির প্রশ্নে জোর দিয়েছে সিপিএম। মূল্যবৃদ্ধি, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের উপরেও জোর দিয়েছে তারা। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে অবশ্য স্থানীয় সমস্যার কথা জানিয়ে ভোট চাইছে সিপিএম। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে আইন-শৃঙ্খলা কোনও কিছুতেই উন্নয়ন হয়নি এই এলাকায়, এই অভিযোগকেই হাতিয়ার করেছে তারা।
১৯৮৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রটি টানা দখলে রেখেছে সিপিএম। তার মধ্যে গত তিন বার জিতেছেন বংশগোপাল চৌধুরী। গত বার তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটককে প্রায় ৭২ হাজার ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। কিন্তু তার পর থেকে এলাকার রাজনৈতিক চিত্র অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। ২০১১ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জেতে তৃণমূল, দু’টি পায় বামেরা। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও ভরাডুবি হয় বামেদের।
এ বার সিপিএমের বংশগোপালবাবুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেন। বিজেপি প্রার্থী করেছে সঙ্গীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়কে। আসানসোলে একটি বড় সংখ্যক ভোটার অবাঙালি হওয়ায় ভাল ফলের আশা করছে বিজেপি। গত বার তারা প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়েছিল। এ বার তারকা প্রার্থী ও মোদী-হাওয়া অনেকটা বেশি ভোট টানবে বলে আশাবাদী বিজেপি নেতারা। এ ছাড়া রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্র। চতুর্মুখি এই লড়াই যে সহজ হবে না, বুঝছে সব পক্ষই। তাই তৃণমূল প্রচারে নেমে ৩৪ বছরের বাম আমলে আসানসোল কয়লা চুরির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ তুলতেই সিপিএম পাল্টা আড়াই বছরের ‘অনুন্নয়নের’ অভিযোগ তুলছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, আসানসোল মহকুমা হাসপাতালকে উন্নত করার জন্য তাঁদের আমলেই পরিকল্পনা হয়েছিল। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে ‘জেলা হাসপাতাল’ নামকরণ করলেও এখানে এখনও পর্যন্ত পরিষেবার কোনও উন্নতি হয়নি। হাসপাতালে শয্যা আড়াইশো থেকে বাড়িয়ে সাড়ে চারশো করা হয়েছে। অথচ, চিকিৎসক থেকে সাফাইকর্মী, সবেরই সংখ্যা কমে গিয়েছে। আসানসোলে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সেখানে কী কী পড়ানো হবে, ঠিক হয়নি। সিপিএমের পাঁচ জন নেতা-কর্মী খুন হলেও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলার এমন পরিস্থিতি যে বাড়িতে খুন হয়ে গিয়েছেন আসানসোল মহিলা থানার ওসি। একের পর এক ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি নিত্য সমস্যা হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আমলে চালু হওয়া ১৩টি ক্ষুদ্র কারখানা ২০১১-এর পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি পার্থবাবুর।
এ ছাড়াও সিপিএম জোর দিচ্ছে জেলা ভাগের বিষয়টিতে। সিপিএম নেতাদের দাবি, আসানসোল-দুর্গাপুর নিয়ে পৃথক জেলা গড়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে বর্তমান সরকার। পার্থবাবুর দাবি, “প্রক্রিয়াগত কিছু সমস্যা রয়েছে, তাই বাম আমলে জেলা ভাগ হয়নি। কিন্তু তৃণমূলের সরকার জেলা ভাগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এত দিনেও কেন সেই প্রক্রিয়া শেষ হল না, প্রচারে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এই বিষয়টি প্রচারে তুলছে কংগ্রেসও। প্রার্থী হওয়ার পরেই স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে বর্তমান রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, শিল্পাঞ্চলে নতুন কোনও শিল্প তৈরি না হওয়ার অভিযোগ করেছেন ইন্দ্রাণী। বিজেপি আবার শিল্পের পাশাপাশি ধসপ্রবণ এলাকার মানুষের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ, এলাকার জল, নিকাশি সমস্যা, ইসিএলে ঠিকা কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ও স্থায়ীকরণ নিয়ে সরব হবে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার।
স্থানীয় সমস্যা নিয়ে অন্য দলের প্রার্থীদের সরব হওয়ার বিষয়টি অবশ্য আমল দিতে নারাজ তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন। বরং, অবৈধ খনন বন্ধে ইসিএল কী ভাবে লাভজনক সংস্থা হয়ে উঠছে, প্রচারে গিয়ে সে কথা বোঝাচ্ছেন তিনি। জেলা ভাগ নিয়েও চিন্তিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। জিতলে ইসিএলের ঠিকাকর্মীদের নানা সমস্যায় নজর, শিল্পে জোয়ার আনার প্রতিশ্রতিও দিচ্ছেন তিনি।
মানুষ কার প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখলেন, জবাব দেবে ইভিএম।