পর্যাপ্ত পরিদর্শক না থাকায় জেলা জুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছেন খোদ স্কুল পরিদর্শকেরা।
তাঁদের দাবি, অবস্থা এমনই যে, পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় শিক্ষা দফতরের দৈনন্দিন কাজ বাকি পড়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আটকে যাচ্ছে সর্বশিক্ষা মিশনের অনুদান ও মিড-ডে মিলের মাসিক হিসেবও।
বর্ধমান জেলা শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি মোট ৪৯টি চক্রে বিভক্ত। এক-একটি চক্রে গড়ে ৪৫টি বিদ্যালয় রয়েছে। সেগুলি পরিদর্শনের জন্য প্রতিটি চক্রে এক জন করে বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআই) থাকার কথা। কিন্তু এর মধ্যে ২০টি চক্রে প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে এসআই নেই। এই চক্রগুলি হল আসানসোল, গলসি, বুদবুদ, গলসি(পশ্চিম), দুর্গাপুর ১, হিরাপুর, কাঁকসা, কাটোয়া পূর্ব ও পশ্চিম, কেতুগ্রাম, খণ্ডঘোষ ১, মঙ্গলকোট ১, মন্তেশ্বর ৩, পাণ্ডবেশ্বর, পূর্বস্থলী (উত্তর), রায়না ১, রায়না ২, জামালপুর, বর্ধমান উত্তর ও বর্ধমান পশ্চিম। শুধু তাই নয়, জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিসেও কর্মীর অভাব রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে সময়ে কাজ শেষ করার জন্য এক জন এসআইকে এক সঙ্গে দু’টি, এমনকী তিনটি চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া শিক্ষাবন্ধুদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
অথচ বছর দশেক আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। স্কুল পরিদর্শকেরাই জানান, সে সময়ে স্কুল পরিদর্শন করা ছাড়া বিশেষ কিছু কাজ ছিল না তাঁদের। কিন্তু মিড-ডে মিল ও সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই এই পদের কাজ ও গুরুত্ব দু’টোই এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। জেলা শিক্ষা সংসদের এক কর্তা জানান, এক জন এসআই ছাত্রছাত্রীদের গুণমান বিচার করা ছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরার উপর নজরদারি করেন। এ ছাড়াও শিক্ষকদের বেতনের বিল বানানো, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশন, ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত কাজ, মিড-ডে মিলের হিসেব, সর্বশিক্ষা মিশনের অনুদান সংক্রান্ত কাজও তাঁদের করতে হয়। এ ছাড়াও রয়েছে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের বৃত্তি বিতরণ, স্কুলছুটের হিসেব রাখার দায়িত্বও তাঁদের।
জেলার একাধিক এসআইয়ের দাবি, মিড-ডে মিলের মাসিক প্রতিবেদন তৈরি ও স্কুলে স্কুলে সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থ বরাদ্দ করার মতো কাজ করতে গিয়েই বেশির ভাগ কাজের দিন চলে যায়। ফলে তাঁদের যেটা মূল কাজ সেই স্কুল পরিদর্শনের কাজ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। কাটোয়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষোভ, “এসআই না থাকায় স্কুলের অনেক কাজ আটকে যাচ্ছে। স্কুলের সমস্যা নিয়ে কার কাছে দরবার করব বুঝতে পারছি না।” সমস্যা মেটাতে এসআইদের সংগঠন রাজ্য সরকারের কাছে শূন্যপদ পূরণের জন্য বার বার দাবি জানিয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি পুলক চক্রবর্তী। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “এসআই না থাকায় স্কুল পরিদর্শন-সহ নানা বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায় কি না তার জন্য জেলাশাসককে বলা হয়েছে।” একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, কোনও শিক্ষকের পেনশন ও পিএফের টাকা পেতে যাতে অসুবিধা হবে না।