নিজেদের ক্ষমতায় থাকা পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগ জানিয়ে কাটোয়া মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি দিলেন কেতুগ্রামের সীতাহাটী পঞ্চায়েতের সিপিএমের দুই সদস্য। গত ২৯ অগস্ট সিপিএমের ওই দুই সদস্য কৃষ্ণা ঘোষ ও বাদল রাজবংশী মহকুমাশাসক ছাড়াও কেতুগ্রাম ২ বিডিও, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও জেলাশাসককে চিঠির প্রতিলিপি দেন। এর আগে, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ বিশ্বাস সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে টেন্ডারে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে বিডিও ও এসডিওকে চিঠি দিয়েছিলেন। মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
সিপিএমের ওই দুই সদস্যের অভিযোগ, দলের নির্দেশে ঠিকাদারদের সঙ্গে পঞ্চায়েতের কর্তাদের ‘১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে রফা হয়েছে’। আইএসজিপি বা তৃতীয় অর্থ কমিশনের অনুদানে সংসদভিত্তিক কাজের জন্য দরপত্র ডাকা হলেও সদস্যেরা জানতে পারেন না কিংবা সহমত ভিত্তিতে হয় না। অভিযোগের উদাহরণে তাঁরা জানান, কয়েকদিন আগে ১৩ লক্ষ টাকার গাছের বরাত দেওয়া হয়েছে। তাতে পঞ্চায়েতের কর্তারা ২০ শতাংশ কমিশন রেখে দরপত্র করেছেন। প্রধান ও উপপ্রধানকে লিখিত ভাবে জানানোর পরেও লাভ হয়নি বলেও তাঁদের দাবি। এ ছাড়াও ভারত নির্মাণ অভিযানে শৌচাগার তৈরির নামে টাকা নয়ছয় কিংবা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও তাঁরা মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে, ওই পঞ্চায়তের প্রাক্তন প্রধান বিকাশ বিশ্বাস-সহ তৃণমূলের সাত সদস্য কেতুগ্রাম ২ বিডিও সুস্মিতা সুব্বার কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজ, আইএসজিপি প্রকল্প ও তৃতীয় অর্থ কমিশন থেকে কাজ করার জন্য সিপিএম পরিচালিত সীতাহাটী পঞ্চায়েত যে দরপত্র ডেকেছে তা অবৈধ। তাঁদের অভিযোগ, পাঁচ লক্ষ টাকার দরপত্র ডাকা হলেও ই-টেন্ডার তো দূরের কথা বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। দরপত্র ডাকার আগে পঞ্চায়েত আইন অনুসারে, গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্থ উপসমিতিতে অনুমোদন করতে হয়। সীতাহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা তাও করেননি। তাঁদের আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও কর্মচারীরা যোগসাজস করে দুর্নীতি করছে। অভিযোগ পাওয়ার পরে ৬ অগস্ট দরপত্র বাতিল করার নির্দেশ দেন কেতুগ্রাম ২ বিডিও। অভিযোগ, সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত বিডিওর নির্দেশ না মেনে দরপত্র খুলে কাজের বরাত দিয়ে দিয়েছে। এরপরেই মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান বিকাশবাবু। অভিযোগ পেয়ে মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা তদন্ত নামেন। জানা যায়, আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকার কাজের জন্য পঞ্চায়েত দরপত্র ডেকেছে। সেখানে তাঁরা অনেক গোলমাল খুঁজে পেয়েছেন। এরপরেই তাঁরা পঞ্চায়েতকে জানিয়ে দেন, কাজ বন্ধ রাখতে হবে এবং যে কাজ হয়েছে তার জন্যও ঠিকাদারদের টাকা দেওয়া যাবে না।
ওই পঞ্চায়েতের সিপিএমের উপপ্রধান সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “আমাদের কোনও সদস্য পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন, এ খবর আমার জানা নেই। বিডিও যখন চিঠি দেন, সেই সময় দরপত্র খুলে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে সে কথা জানিয়ে চালু কাজ কী ভাবে বন্ধ করব তা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সদুত্তর পাইনি। পরে মহকুমাশাসক আমাদের ঠিকাদারদের টাকা দিতে মানা করেছেন। আমরা সেই নির্দেশ মেনে চলছি।”