দেব দর্শনে গাঁ উজিয়ে এল জামালপুর

ভোটের কল্যাণে এই প্রথম ‘সেলিব্রিটি’ দেখল জামালপুর। পূর্বস্থলী ব্লকের এই ছোট্ট গ্রামের আকাশে রবিবার বিকেলে প্রথম বার যখন হেলিকপ্টার দেখা যায়, ঘড়িতে তখন ৪টে বেজে ৭ মিনিট। মাঠের এ দিক ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিড়টা তখন ছুটে এসে জমাট বাঁধল স্থানীয় গরুর হাটের কাছে তৈরি হেলিপ্যাডের চারপাশে। কিন্তু হেলিকপ্টার যখন মাটি থেকে মাত্র ফুট কুড়ি দূরে, তখনই আচমকা শুরু হল ধূলোঝড়। হেলিপ্যাডে নামতে না পেরে কিছুটা চক্কর মেরেই আকাশে মিলিয়ে গেল হেলিকপ্টারটি। জমাটি ভিড়ে ছড়িয়ে পড়ল দীর্ঘশ্বাস।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৬
Share:

পূর্বস্থলীতে মঞ্চে তখন দেব। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটের কল্যাণে এই প্রথম ‘সেলিব্রিটি’ দেখল জামালপুর।

Advertisement

পূর্বস্থলী ব্লকের এই ছোট্ট গ্রামের আকাশে রবিবার বিকেলে প্রথম বার যখন হেলিকপ্টার দেখা যায়, ঘড়িতে তখন ৪টে বেজে ৭ মিনিট। মাঠের এ দিক ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিড়টা তখন ছুটে এসে জমাট বাঁধল স্থানীয় গরুর হাটের কাছে তৈরি হেলিপ্যাডের চারপাশে। কিন্তু হেলিকপ্টার যখন মাটি থেকে মাত্র ফুট কুড়ি দূরে, তখনই আচমকা শুরু হল ধূলোঝড়। হেলিপ্যাডে নামতে না পেরে কিছুটা চক্কর মেরেই আকাশে মিলিয়ে গেল হেলিকপ্টারটি। জমাটি ভিড়ে ছড়িয়ে পড়ল দীর্ঘশ্বাস।

ওই হেলিকপ্টারেই ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও ঘাটাল কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দেব। প্রথমে ঠিক ছিল সভা করতে আসবেন মুকুল রায়। পরে তৃণমূল নেতৃত্ব জানতে পারেন সভায় থাকবেন দেব। এই খবর জানার পরেই তৃণমূল নেতা-কর্মী ছাড়াও প্রচুর সাধারণ মানুষ ভিড় করেন সভাস্থলে। কিন্তু প্রথম বার হেলিকপ্টার না নামায় হতাশ হন তাঁরা। শুকনো মুখে ঘুরতে দেখা যায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। তৃণমূলের পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ফোন করেন মুকুল রায়কে। কয়েক বারের চেষ্টায় ফোনে পাওয়া যায় মুকুলবাবুকে। তিনি ও দেব তখন জেলার অন্যপ্রান্তে হাটগোবিন্দপুরে অন্য সভায় পৌঁছে গিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তপনবাবু মুকুল রায়কে ফোনে জানান, জামালপুরের মানুষ তাঁদের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তখন মুকুলবাবু তাঁকে জানান, তিনি না গেলেও দেব জামালপুরে যাচ্ছেন। এই খবর পাওয়ার পরেই ফের প্রচার শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্ব। এ বার যাতে আর ধুলোঝড় না হয়, তার জন্য হেলিপ্যাডে জল ঢালা হয়। সভাস্থলে বাড়তে থাকে ভিড়।

Advertisement

বিকেল ৪টে ৫০ নাগাদ ফের হেলিকপ্টার চক্কর দিতে শুরু করে জামালপুরের আকাশে। এ বার অবশ্য সফল ভাবেই হেলিপ্যাডে নেমে আসে হেলিকপ্টার। ছাই রঙের টি শার্ট ও হালকা নীল জিনস পড়ে কপ্টার থেকে নামেন দেব। আশপাশের জনতার উদ্দেশ্য হাত নেড়ে উঠে যান মঞ্চে। এ দিন মিনিট বারো মঞ্চে ছিলেন তিনি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। জনতার দাবি ছিল, দেবের মুখ থেকে তাঁর কোনও সিনেমার ‘ডায়লগ’ শোনার। যদিও এ ব্যাপারে তাঁদের নিরাশ হতে হয়। মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূল নেতৃত্বকে দেব জানান, পাঁচটার পরে হেলিকপ্টার উড়তে সমস্যা হবে। দেব যখন মঞ্চ থেকে নামেন তখনও তাঁকে এক বার ছোঁয়ার জন্য পিছন পিছন ছুটতে দেখা যায় জনতাকে। ভিড় ঠেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে হেলিকপ্টারে পৌঁছে দেন। এ দিনের সভায় খুদে, মহিলা ও স্কুল পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। জামালপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগে তাঁদের গ্রামে কোনও তারকা আসেননি। এ বার তাঁদের সেই সুযোগ হল।

এ দিন মুকুলবাবু ও দেব জেলার প্রথম সভাটি করেন মন্তেশ্বরে। সেখানে সারদা প্রসঙ্গে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেন মুকুলবাবু। তিনি দাবি করেন, “শুধু সিবিআই, সিবিআই করে চেঁচানো হচ্ছে। আসলে সিবিআই হল কংগ্রেস ব্যুরো অব ইন্ডিয়া। তৃণমূল কী সারদার টাকা চুরি করেছে? আমি কী সারদার টাকা চুরি করেছি। সারদা নিয়ে যে কোনও রকম তদন্তে আমরা ভয় পাই না। সনিয়া, রাহুল, চিদাম্বরম, বুদ্ধদেব১৬ তারিখের পরে কেউ ছাড় পাবে না।” তাঁর অভিযোগ, “ইউপিএ ২ সরকারটাই হল কেলেঙ্কারির সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও কেলেঙ্কারির বাইরে নয়। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, পারলে আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করুন।” এই সভা থেকে এলাকার নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়িয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “ইগোর লড়াই ছেড়ে দিয়ে এক হয়ে লড়তে হবে। ইগোর লড়াইয়ের জন্যই গত বিধানসভায় আমরা মন্তেশ্বরে হেরেছিলাম। সে জন্য মন্তেশ্বর এলে কষ্ট হয়। আমি চলে যাওয়ার পরে যেন শুনতে পাই, সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন।” মন্তেশ্বরের সভাতেও দেব তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement