তিন গ্রামে ভাঙচুর সিপিএম কর্মীদের বাড়ি

মাঝ রাতে তিন গ্রামের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ১৬টি বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের দাবি, পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই শনিবার রাতে কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের ওই তিন গ্রামে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ওই তিন এলাকায় সিপিএমই হিংসা ছড়াচ্ছে, যার জেরে মার খেতে হচ্ছে তাদের নেতা-কর্মীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৩
Share:

ভাঙচুরের পরে লণ্ডভণ্ড বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

মাঝ রাতে তিন গ্রামের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ১৬টি বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের দাবি, পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই শনিবার রাতে কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের ওই তিন গ্রামে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ওই তিন এলাকায় সিপিএমই হিংসা ছড়াচ্ছে, যার জেরে মার খেতে হচ্ছে তাদের নেতা-কর্মীদের।

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, শনিবার রাত দুটো নাগাদ বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের আটকেটিয়া গ্রামে ছ’টি গাড়ি করে তৃণমূলের লোকজন ঢুকে পড়ে। গাড়িগুলিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুটি মোটরবাইক। গ্রামে ঢুকেই মুখে কাপড় বাঁধা কয়েকজন বাড়ি, ঘরে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর করতে শুরু করে। বাড়ির ভেতরের সমস্ত জিনিস তছনছ করে। হামলাকারীদের হাতে হাঁসোয়ার মতো অস্ত্র ছিল বলেও সিপিএমের দাবি। এর পরে গোপালদাসপুর ও রামনগর গ্রামেও হামলা চলে। সিপিএমের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরে হামলা চালানো হয় বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা সিপিএম নেতা সন্দীপ দুবের বাড়িতে। বাইরে থেকে দরজার খিল ভেঙে ঢুকে গালিগালাজ করা হয়। সন্দীপবাবুর ছেলের বইপত্র ছিঁড়ে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও তাঁদের দাবি। সাড়ে তিনটে নাগাদ গ্রাম থেকে হামলাকারীরা বেরিয়ে যায় বলে আক্রান্তরা জানান।

কালনায় বিজেপির মিছিলে ভাঙচুর।

Advertisement

রবিবার ওই এলাকাগুলিতে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অঞ্জু কর, কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক সুকুল শিকদার, প্রাক্তন সম্পাদক করুণা ভট্টাচার্য, জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একটি দল। পরিদর্শন শেষে স্বপনবাবু বলেন, “আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকটি আদিবাসী পরিবার রয়েছে। হামলার সঙ্গে লুঠতরাজও চলেছে।” তাঁর দাবি, “কারও কানের দুল আবার কারও নগদ টাকা খোওয়া গিয়েছে।” সিপিএমের অভিযোগ, পরিকল্পিত ওই হামলায় তৃণমূলকে সাহায্য করেছে পুলিশও। পরিদর্শক দলটির দাবি, আজ, সোমবার কালনা আদালতে বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করবেন তাঁরা।

কিন্তু আচমকা তিন গ্রামে এমন পরিস্থিতি কেন?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছিল ১ জানুয়ারি, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন থেকেই। ওই দিন গোপালদাসপুর মোড়ে তৃণমূলের তরফে বস্ত্র বিতরণের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আলমগীর সাত্তারও ছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের সভার কাছেই সিপিএমের কিছু লোক জোরে মাইক বাজাচ্ছিল। বস্ত্রবিতরণের অনুষ্ঠান ঠিকমতো চালাতে মাইক বাজানো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয় বলেও তৃণমূলের দাবি। এরপরেই সিপিএম হামলা করে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। দলের কালনা ২ ব্লকের সভাপতি প্রণব রায় বলেন, “ওই দিন আমাদের লোকজনের উপর নির্মম ভাবে হামলা চালায় সিপিএমের কয়েকজন। তাতেই শেষ নয়। পরের দিন আর একটি হামলা করে তারা।” তাঁর আরও দাবি, “দু’দফায় দলের ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ১৭ জনের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। তবে তাদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।” তাহলে শনিবারের হামলা কি এরই পাল্টা? প্রণববাবুর জবাব, “তৃণমূল এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে সিপিএম।” তাঁর দাবি, গত সাড়ে তিন বছরে এই ব্লকে কোনও সিপিএম নেতার সম্পত্তি লুঠ হয়নি, কাউকে এলাকা ছেড়ে যেতে হয় নি। তাহলে হামলা করল কারা? তৃণমূলের দাবি, “ওরা নিজেরাই এ সব করে আমাদের নামে চালানোর চেষ্টা করছে।” আর ১ জানুয়ারির ঘটনা নিয়ে সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, “বিষয়টি অরাজনৈতিক। ওই দিন গোপালদাসপুরে একটি বনভোজন চলছিল। সেখনেই কয়েকজনের সঙ্গে তৃণমূলের গণ্ডগোল বেধেছিল বলে শুনেছি।” তাঁর দাবি, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে সিপিএম।

পুলিশ অবশ্য শনিবারের হামলায় ঘটনায় তৃণমূলকে সাহায্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কালনা থানার দাবি, ওই তিন এলাকায় শনিবার রাতে কয়েকজন অভিযুক্তের খোঁজে যাওয়া হয়েছিল। যদিও তারা এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়াই ধরা যায়নি। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাও বলেন, “ওই রাতে কালনার এসডিপিও, সিআই এবং ওসি কিছু অভিযুক্তকে ধরতে গিয়েছিলেন। পুলিশ কোনও হামলা করেনি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement