ঘরছাড়াদের বাড়ি ফেরাতে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিল বর্ধমান জেলা সিপিএম। একই সঙ্গে জেলায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ বন্ধ করে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করার জন্যও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে সিপিএম। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ওই চিঠি রাজ্য কমিশনের কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। রাজ্য কমিশনের সহকারী নির্বাচন কমিশনার আবার বর্ধমান জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। সৌমিত্রবাবু বলেন, “বর্ধমানের পুলিশ সুপার ও আসানসোল-দুর্গাপুরের কমিশনারকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা সিপিএমের অভিযোগ, গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বর্ধমান জেলায় বেশ কয়েকটি লোকাল কমিটির দফতর, শাখা অফিস বন্ধ করে দেয় তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ‘নজরদারি’র জন্য বন্ধ অফিসের একাংশ খোলা যায়। কিন্তু নির্বাচনের পরেই তৃণমূলের ‘সৌজন্যে’ ফের তা বন্ধ হয়ে যায়। কেতুগ্রাম ১ উত্তর ও দক্ষিণ লোকাল কমিটির পক্ষে আনসারুল হক রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, কান্দরা-সহ কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে সিপিএমের দু’জন কর্মীর চায়ের দোকানে বসার ব্যাপারেও ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছে তৃণমূল। ওই চিঠিতে আনসারুল হক নির্বাচন ঘোষণার পরে তৃণমূল কোথায় কোথায় তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপর আক্রমণ করেছে তা বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন।
পরে ১১ মার্চ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে সিপিএম দাবি করেছে, গত ৩৪ মাসে তাদের ১৬ জন কর্মী-সমর্থক তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছে। সিপিএমের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও বহু মানুষজন তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন। এছাড়াও প্রচুর লোকজনকে তৃণমূলের নেতাদের মোটা অঙ্কের ‘জরিমানা বা চাঁদা’ দিয়ে বাড়িতে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সিপিএমের আশঙ্কা, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই তৃণমূল বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করবে।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ওই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ‘স্থানীয় থানার পুলিশের মদতে তৃণমূল একের পর এক দুষ্কর্ম করে চলেছে। স্বয়ং পুলিশ সুপারও সরাসরি তৃণমূলকে মদত দিচ্ছে।’ তিনি সাফ বলেন, “সিপিএম আক্রান্ত হলেও আক্রমণকারী, এই নীতিতেই বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার চলছেন। নির্বাচন কমিশনারের কাছে পুলিশের নিরপেক্ষতা দাবি করে আমরা আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে তা দিয়েছি। পুলিশ নিরপেক্ষ না হলে জেলায় পর্যবেক্ষক আসার পরে ৩০-৪০ হাজার লোকের জমায়েত করে পর্যবেক্ষকের কাছে স্মারকলিপি দিতে বাধ্য হব।”
যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি বর্ধমান জেলার পুলিশ কর্তারা। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য বলেন, “নির্বাচন কমিশনে এরকম কোনও অভিযোগ হয়েছে বলে আমি জানি না। কিন্তু পুলিশ যে কোনও দলের প্রতি পক্ষপাত করছে না, হাতেকলমে তার প্রমাণ রয়েছে। গত দু’সপ্তাহের মধ্যে মন্তেশ্বরে ২১ জন, গলসিতে ৩৯ জন, খণ্ডঘোষে ৮ জন তৃণমূল সমর্থক গ্রেফতার হয়েছেন। বর্ধমান শহরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী পাপ্পু রাউথ, মঙ্গলকোটে সাইফুল খান, কেতুগ্রামে শহিদ দফাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, “গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, এমন দুষ্কৃতীদেরই পুলিশ ধরছে। যদি কোনও থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাহলে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ করলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।
সিপিএম জানিয়েছে, দফায় দফায় তৃণমূলের আক্রমনে বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, রায়না, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর-সহ বর্ধমান জেলার ৩১৩ জন সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন। যাঁদের অনেককেই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এলাকার বাইরে থেকে ভোটে লড়তে হয়েছে। অমল হালদার বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের দলীয় দফতর, শাখা সংগঠনগুলো খোলা দরকার। একই সঙ্গে ঘরছাড়াদের বাড়ি ফেরানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। ওই চিঠির সঙ্গে সিপিএম ঘরছাড়া ৩১৩ জনের ভোটের পরিচয় পত্রের নম্বর, ঠিকানা-সহ বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “পুলিশের কাছে অভিযোগ নেই এমন মানুষজন গ্রামে শান্তিতে বসবাস করুক, এটা তো আমরাও চাই। আর সিপিএম হেরে যাবে বুঝে আগে থেকেই গল্প ফাঁদছে।”