বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজে কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের বিরোধের জেরে অচলাবস্থা চলছেই। দুর্গাপুরের বিধাননগরের ওই কলেজে মঙ্গলবার শিক্ষকদের আন্দোলনে ফের সামিল হন কিছু পড়ুয়া। কলেজের সামনের রাস্তায় এ ভাবে আন্দোলনের জেরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে পুলিশ এ দিন আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবার জানান, আন্দোলন তুলে নিয়ে বুধবার কলেজে যোগ না দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে যখন-তখন দুর্ব্যবহার করেন। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ছুটির দিনেও ক্লাস নিতে বাধ্য করা হয়। আগাম নোটিস ছাড়া শিক্ষকদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে বেতনও দেওয়া হয় না। এই সব অভিযোগে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকদের একাংশ। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষ দু’দফায় ৩৫ জন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন। তার পর থেকে বরখাস্ত শিক্ষকদের বিনা শর্তে কাজে ফেরানো এবং অন্য দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষকেরা। সোমবার শিক্ষকদের মিছিলে হাজির ছিলেন তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এবং তৃণমূল শিক্ষা সেলের দুর্গাপুরের নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে শিক্ষকেরা দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। এর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের পড়ুয়া ধরে আনতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিবাদে দু’টি বিভাগের ২৬ জন শিক্ষক ৩১ জুলাই একযোগে পদত্যাগ করেন। ২ অগস্ট কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেন। কিন্তু পরে ফের গোলমাল বাধে।
রোজকার মতো মঙ্গলবার সকাল থেকে কলেজের সামনের রাস্তায় ফের অবস্থান শুরু করেন শিক্ষকেরা। পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। যোগ দেন পড়ুয়ারাও। চাকরির বন্দোবস্ত না করা, হস্টেলে অব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাঁদের। ওই পড়ুয়ারা জানান, তাঁদের বহু সহপাঠী আন্দোলনে সামিল হতে চান। কিন্তু, কলেজ কর্তৃপক্ষ জোর করে তাঁদের কলেজে আটকে রেখেছেন। পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে পুলিশ পৌঁছয়। পরে পুলিশ আন্দোলকারীদের জানিয়ে দেয়, এ ভাবে রাস্তা আটকে আন্দোলন করলে আইন-শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাঁদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি আইনগত ভাবে মেটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। বিকেলে আন্দোলনকারীরা চলে যান। পুলিশও এলাকা ছাড়ে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের তরফে সুদীপ মজুমদারের অবশ্য দাবি, রাস্তার এক পাশে তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছেন। তাই আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা অমূলক। আজ, বুধবার একই জায়গায় ফের অবস্থান হবে বলে জানান তিনি। এ দিন বিক্ষোভে যোগ দেন ‘আসানসোল-দুর্গাপুর টিচার্স অ্যান্ড স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। তাঁর অভিযোগ, “কলেজ কর্তৃপক্ষের হঠকারিতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের পাশে আছি।” কলেজের ম্যানেজার (প্রশাসন) বিপ্লব বসুঠাকুর জানান, কলেজের পক্ষ থেকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আজ, বুধবারের মধ্যে সবাইকে কলেজে যোগ দিতে হবে। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।