কন্যাশ্রীর অ্যাকাউন্ট খুলতে বাড়ি থেকে একাই বেরিয়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটি। বাসস্টপে নামতেই পরিচিত দুই যুবক তাকে জোর করে মোটর ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় কাটোয়ার গ্রামে। অভিযোগ, সেখানেই ধর্ষণ করা হয় ওই কিশোরীকে। পরে আশপাশের বাসিন্দারা বাড়িতে খবর দিলে উদ্ধার করা হয় মেয়েটিকে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই মঙ্গলকোটের মালিয়ারি গ্রামের গোপাল ঘোষের বিরুদ্ধে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই কিশোরী। গোপালের সঙ্গী চাকুলিয়া গ্রামের জয়ন্ত ঘোষের বিরুদ্ধেও অপহরণে সাহায্য করার অভিযোগ করা হয়েছে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “আইন মোতাবেক সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। তদন্ত চলছে।” শুক্রবার ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই কিশোরীর দেহে ধর্ষণের চিহ্ন মিলেছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে কাটোয়া এসিজেএম (৩) দ্যুতি রায় ওই কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নেন।
মঙ্গলকোটের মাজিগ্রাম পঞ্চায়েতে অজয়ের বাঁধ লাগোয়া গ্রামে বাড়ি ওই কিশোরীর। স্থানীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সে। বুধবার কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাম থেকে আট কিলোমিটার দূরে সিঙ্গত গ্রামীণ ব্যাঙ্কে যাবে বলে বেলা ১০টা নাগাদ বেড়িয়েছিল ওই কিশোরী। অভিযোগ, বাসে করে মাজিগ্রাম বাসস্টপে নামার পরেই গোপাল ও জয়ন্ত জোর করে মোটর ভ্যানে তোলে তাকে। প্রথমে খুদরুন বাসস্টপ, সেখান থেকে বাসে করে কাটোয়া নিয়ে যায় ওই কিশোরীকে। কাটোয়া থেকে ফের বাসে করে রায়েরপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
ওই কিশোরীর আরও অভিযোগ, রায়েরপাড়া গ্রামে একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে গোপাল জোর করে তাকে সিঁদুর পরিয়ে দেয়। শাঁখা-পলা পরতেও বাধ্য করে। পরে একটি বাড়িতে নিয়ে এসে গোপাল তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তবে রাতেই পালিয়ে যায় গোপাল। ওই কিশোরীর এক দাদা রাজকুমার রাজবংশীর দাবি, “বোন ওই জায়গা থেকে কোনওরকমে পালিয়ে উন্মাদের মতো ঘুরছিল। সন্ধ্যায় অচেনা একটি মেয়ে গ্রামে একা একা ঘুরছে দেখে কাটোয়ার মোস্তাফাপুর গ্রাম থেকে একজন ফোন করে আমাদের খবর দেয়। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই গ্রাম থেকে বোনকে বাড়ি নিয়ে আসি।”
ওই কিশোরীর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটির বাড়ির দাওয়াই বসে রয়েছে তার ঠাকুমা ও ভাই। তাঁরাই জানান, অভিযুক্ত গোপাল বিবাহিত। তার স্ত্রী ন’মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। ওই কিশোরী গোপালকে মামা বলে ডাকত বলেও তাঁদের দাবি। ওই কিশোরীর মা কাটোয়া মহকুমা আদালতে জানান, গোপালের কাছ থেকে টাকা পেতেন তাঁরা। কিন্তু টাকা চাইতে গেলেই গোপাল অশান্তি করত, মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিত বলে তাঁর অভিযোগ। গোপালের বাড়ির কেউ অবশ্য বারবার ডাকার পরেও সাড়া দেননি।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মেয়েটির। রাতে দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে কথাও হত। তবে তাকে যে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হবে তা ওই কিশোরী বুঝতে পারেনি বলেই পুলিশের অনুমান। পুলিশ আরও জেনেছে, কাটোয়ার রায়েরপাড়া গ্রামের যে বাড়িতে ওই কিশোরীকে তোলা হয়েছিল, সেটি আরেক অভিযুক্ত জয়ন্তর দিদির বাড়ি।