কালনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যক্তি কুৎসার অভিযোগ সিপিএমের

তুহিন হত্যার রায় এখনও বের হয়নি। অথচ বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বহু জায়গাতেই দেওয়াল লিখনে তাদের প্রার্থীকে অপরাধী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল সিপিএম। তাদের দাবি, এ ধরনের প্রচার কুৎসা ছড়ানোর পর্যায়ে পড়ে, যা নির্বাচনী বিধি ভাঙছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তাঁরা। আবার তৃণমূলের তুহিন ‘তাসে’র পাল্টা হিসেবে সিপিএম তৃণমূলের ঝাড়খণ্ড প্রার্থীর মামলার বিবরণও তুলে ধরছে প্রচারে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

এ ধরনের দেওয়াল লিখন নিয়েই বিতর্ক। কালনা শহরে নিজস্ব চিত্র।

তুহিন হত্যার রায় এখনও বের হয়নি। অথচ বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বহু জায়গাতেই দেওয়াল লিখনে তাদের প্রার্থীকে অপরাধী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল সিপিএম। তাদের দাবি, এ ধরনের প্রচার কুৎসা ছড়ানোর পর্যায়ে পড়ে, যা নির্বাচনী বিধি ভাঙছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তাঁরা। আবার তৃণমূলের তুহিন ‘তাসে’র পাল্টা হিসেবে সিপিএম তৃণমূলের ঝাড়খণ্ড প্রার্থীর মামলার বিবরণও তুলে ধরছে প্রচারে।

Advertisement

কাটোয়ার তুহিন হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসের। দল তাঁকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই কাটোয়ার রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তোপ দাগা শুরু করে তৃণমূল। সম্প্রতি কালনা ২ ব্লকে একটি হিমঘরে সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটি একটি কর্মিসভা করে। সভায় ঈশ্বরবাবু বলেন, “আদালতে মামলার বিচার চলছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে ২০০৭ সালের ওই ঘটনাকে নিয়ে কাটোয়া ও কালনায় এমন কিছু দেওয়াল লিখন করা হয়েছে যা কুরুচিকর। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।” সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রার্থীকে জড়িয়ে এ ধরনের দেওয়াল লিখনের কথা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। এরপরেই প্রশাসনের তরফে দেওয়াল লিখনটি মুছে দেওয়া হয়। বিষয়টি যে নির্বাচনী বিধি ভেঙেছে তা স্পষ্ট।

প্রশ্ন উঠছে, খুনের মামলায় অভিযুক্তকে প্রার্থী করলে বিরোধীরা কী এমনিতেই সুবিধা পাবে না? ঈশ্বরবাবুর বক্তব্য, “আমি দীর্ঘ দিন ধরে দলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব সামলেছি। কয়েকবার জেলা পরিষদের সদস্য ছিলাম। দল আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। এখনও পর্যন্ত যা সমর্থন পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে বড় ব্যবধানেই জিতব। আর এর আগেও বহু মিথ্যে মামলায় বামপন্থীদের জড়ানো হয়েছে। জেল থেকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নজির রয়েছে।” তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন ঈশ্বরবাবু। তাঁর কথায়, “আমার দিকে আঙুল তোলার আগে ওরা নিজেদের দেখুক। ওদের ঝাড়খণ্ডের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অজস্র মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১৭টি খুনের।” আরেক প্রার্থী সুনীল মণ্ডলকেও তাঁর তোপ, “সুযোগ বুঝে ভোল পাল্টানো লোককে মানুষ ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। কোনও দিন না আবার ইনক্লাব জিন্দাবাদ বলে বসেন উনি।”

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য তুহিন হত্যায় অভিযুক্তকে সিপিএম প্রার্থী করায় আখেরে লাভই দেখছে। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডলও পেশায় শিক্ষক। তাঁর দাবি, সিপিএম যাঁকে প্রার্থী করেছে তাঁকে সাধারণ মানুষ পছন্দ করছেন না। এটা তো আমাদেরই প্লাস পয়েন্ট। তিনি আরও বলেন, “সিপিএম আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে। আমি যদি দলের মধ্যে কোনও আঁতাত করতাম, ভিতরের কথা প্রচার করতাম তাহলে একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না বলেই ওই দল ছেড়েছি। মানুষ সব জানেন। তাই ওদের প্রচার কোনও কাজে আসবে না।” আর দেওয়াল লিখনে কুৎসা নিয়ে সুনীলবাবুর দাবি, এরকম ঘটেছে বলে জানি না। তবে প্রচারে দলীয় কর্মীদের সতর্ক করা হচ্ছে, যাতে কোথাও নির্বাচনী বিধি না ভাঙে।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলি তাদের কাজ, কর্মসূচি, ইস্তেহার, নীতি ইত্যাদি নিয়ে দেওয়াল লিখন করতে পারে। ব্যক্তিগত বা দলের বিরুদ্ধে কুৎসা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের আওতায় পড়ে। মহকুমাশাসক বলেন, “একটি ক্ষেত্রে আমরা দেওয়াল লিখন মুছেছি। এর পরেও কোথাও দেখা গেলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়াল মুছতে বলা হবে। তারা তা না করলে প্রশাসন করবে। সেক্ষেত্রে দেওয়াল মোছার খরচ ওই রাজনৈতিক দলটির খরচের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement