নবাবহাটে চলছে অবরোধ। আটকে যানবাহন। নিজস্ব চিত্র।
টানা তিন দিন ছুটির পরে স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি খুলতেই ব্যস্ত সময়ের অবরোধে থমকে গেল যানবাহন। শহরের এক জায়গায় অবরোধ তোলা নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বচসাও বাধে কংগ্রেস নেতাদের। দুই কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
মঙ্গলবার বীরভূমের সাত্তোর-সহ নানা জায়গায় মহিলাদের উপর পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে এক ঘণ্টার অবরোধ ডাকে কংগ্রেস। বর্ধমান শহরের বিজয়তোরণ, নবাবহাট, মেমারির চকদিঘি মোড়েও অবরোধ চলে। এর জেরে তীব্র যানজট হয় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। বাস, লরি, গাড়ি আটকে পড়ায় ক্ষুব্ধ হন শহরবাসী। অভিযোগ, স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা অবরোধ তুলতে গেলে কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে বচসাও বাধে। ঘটনাস্থলে আসতে হয় পুলিশকে। দুই কংগ্রেস কর্মী গ্রেফতারও হন। তবে ততক্ষণে অবরোধের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় কংগ্রেস কর্মীরা নিজেরাই অবরোধ তুলে নেন। পরে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই দুই কংগ্রেস কর্মীকেও।
তবে গণ্ডগোলের খবর পাওয়ার পরেও পুলিশের দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয়দের দাবি, অবরোধ এমনিতেই ১২টায় উঠে যাওয়ার কথা। সেখানে পুলিশ নবাবহাটে পৌঁছেছে ১২টার মিনিট পাঁচেক আগে। কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ যখন পৌঁছয় তখন এমনিই অবরোধ তোলার সময় হয়ে গিয়েছে। বর্ধমান থানায় আইসি আব্দুল গফ্ফর অবশ্য জানিয়েছেন, নবাবহাট মোড়ে মাত্র দশ মিনিট পথ অবরোধ করা হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে, পরে অবশ্য তাঁদের থানা থেকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিন শহরের একাধিক মোড়-সহ মেমারি, কাটোয়াতেও অবরোধ হয়। জেলা কংগ্রেস নেতা আজিজুল হক মণ্ডলের দাবি, জেলার সমস্ত ব্লকেই এ দিন সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নানা জায়গায় মহিলাদের উপর পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে ডাকা পথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আর এক জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধায়েরও দাবি, “কংগ্রেস কতটা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, আমরা তা দেখিয়ে দিয়েছি।”
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বর্ধমানের জিটি রোড সংলগ্ন নবাবহাটে গিয়ে দেখা যায়, জনা তিরিশেক কংগ্রেস কর্মী দলের পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন। রাস্তায় বসে, দাঁড়িয়ে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। ব্যস্ত সময়ের অবরোধে জিটি রোডে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে যানবাহন। আটকে পড়ে যাত্রীবাহী বাস, মালপত্রে ভরা ট্রাক, ট্রাক্টর। তবে অ্যাম্বুল্যান্স ও স্কুলবাসগুলিকে অবরোধে আটাকানো হয়নি। প্রচুর মানুষ পথ অবরোধে নাকাল হন এ দিন। কয়েক জনকে অবরোধের প্রতিবাদ করতেও দেখা যায়। একটি দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের বাস থেকে নেমে কিছু যাত্রীকে বলতে শোনা যায়, “অনেকক্ষণ হয়েছে। এ বার অবরোধ তুলে নিন।” তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের বাদানুবাদও হয়।
জামুড়িয়ার চাঁদা মোড়ে অবরোধ তুলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
তখনই অবরোধ তোলার কথা বলে এগিয়ে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শিবসুন্দর ঘোষ ও তাঁর অনুগামীরা। তাঁরা দাবি করেন, মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। এখনই ওই অবরোধ তুলে নিতে হবে। অনুরোধ থেকে কথাবার্তা বচসায় পৌঁছয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তৃণমূলের ওই নেতা গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিলে, মারমুখী কংগ্রেস নেতা আজিজুল হক মণ্ডল ও যুব নেতা তন্ময় সিংহরায় এগিয়ে আসেন। তাঁরা চিৎকার করে শিবসুন্দরবাবুকে গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ। এর মধ্যেই দুপুর ১১টা ৫৫ নাগাদ বর্ধমান থানার একটি ভ্যান থেকে নেমে এক পুলিশ কর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই এক ঘণ্টা অবরোধের সময় পার হয়ে যায়। অবরোধ তুলে কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।