সগড়াই মোড়ে চলছে অবরোধ। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাস শহরে ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে খণ্ডঘোষ, রায়নার ৮ জায়গায় অবরোধ করল সিপিএম। অবরোধ তুলতে পুলিশ ও তৃণমূল জোড়া হামলা চালিয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, রায়না, খণ্ডঘোষের বাদুলিয়া, শ্যামসুন্দর, উখরিদে ভাঙচুর, মারধর এমনকী বোমাবাজি হয়েছে। প্রায় ১৫ জন সিপিএমের নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। যদিও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমের মারে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই তৃণমূল নেতা।
সিপিএমের অভিযোগ, বর্ধমান শহরে বাস না ঢোকায় মুশকিলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। টোটো ও রিকশা ভাড়া বাবদ বহু টাকা খরচও হচ্ছে। তা ছাড়া শহর বা বাইরে থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন যাঁরা তাঁরাও সমস্যায় পড়ছেন— এই দাবিতে এ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত সিদ্ধান্ত ছিল সিপিএমের। তবে পুলিশের অনুমতি ছিল না। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বর্ধমান-আরামবাগ রোডের বাঁকুড়া মো়ড়ে সিপিএমের জমায়েত শুরু হতেই অবরোধ তুলতে সচেষ্ট হয় পুলিশ। সিপিএমের অভিযোগ, আশপাশে তৃণমূলের লোকজনও জড়ো হতে থাকে। পরিস্থিতি দেখে বাঁকুড়া মোড় থেকে অবরোধ তুলে সগড়াই মোড়ে অবরোধে বসেন সিপিএম নেতারা। মিনিট চল্লিশেক অবরোধ চলে। ঘণ্টাখানেক ধরে যানবাহন আটকে ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই অবরোধের জন্য জড়ো হওয়া কর্মী-সমর্থকদের বাস থেকে জোর করে নামিয়ে মারধর করা হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারের দাবি, ‘‘তৃণমূলের লোকেদের জড়ো হওয়ার খবর পাওয়ার পাওয়ার পরে বাঁকুড়া মোড় অবরোধ না করার সিদ্ধান্ত নিই। দলীয় কর্মীদের রায়না, খণ্ডঘোষের ১০টি জায়গায় অবরোধ করতে বলি।’’ তবে খণ্ডঘোষের দইচাঁদা, খালেরপুর, বাদুলিয়া, রায়নার শ্যামসুন্দর, সেহরাবাজারে গাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করা হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগে। উখরিদে বোমাবাজিও হয়েছে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মফিজুর রহমানকে বাদুলিয়াতে মারধর করা হয়েছে বলেও সিপিএমের দাবি। সগড়াই মোড়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে অবরোধে সামিল হন জেলা কমিটির সদস্য উদয় সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনের অবরোধ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। জনস্বার্থে ও দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাস যাতে শহরে ঢুকতে পারে সে জন্যই করা হয়েছে।’’ অবরোধ বানচাল করে দিতে পুলিশ ও তৃণমূল এক সঙ্গে সন্ত্রাস চালিয়েছে বলেও তাঁর দাবি। অমলবাবু, উদয়বাবু দু’জনেই জানান, বর্ধমানের ব্যবসা বাজার অনেকটাই দক্ষিণ দামোদরের জনপদগুলির উপর নির্ভরশীল। বাস না ঢোকায় ব্যবসাও মার খাচ্ছে।
তবে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা ও বর্ধমান জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ অলোক মাঝি। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমাদের দলের কেউ অবরোধকারীদের মারধর করেনি। ওদের লোকজন জোগাড় হয়নি। তাই এই সব মিথ্যে অভিযোগ করছে।’’ কাঁইতি গ্রামে সিপিএম বিধায়ক বাসুদেব খানের নেতৃত্বে তৃণমূলের দুই স্থানীয় নেতা প্রভাস মণ্ডল ও দেবব্রত রায়কে মারধর করা হয়েছে বলেও তৃণমূলের অভিযোগ। প্রভাতবাবু বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি।
এ দিকে খণ্ডঘোষ থানার ওসি বখতিয়ার হোসেন ও রায়নার ওসি সঞ্জয় রায় বলেন, ‘‘সিপিএমের অবরোধ সম্পূর্ণ বেআইনি। অবস্থান বা অবরোধ সম্পর্কে পুলিশকে জানানো হয়নি। বর্ধমান-আরামবাগ রোড যাতে সচল থাকে তার জন্য পুলিশ অবরোধ করতে বাধা দিয়েছে।’’