অশান্তি রোখার চেষ্টা ঠেক ভেঙে

ভাতারের আড়রা গ্রামের মহিলারা শেষে চোলাই ঠেক বন্ধের আন্দোলনে নামেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে চোলাই কারবারিদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে, এই অভিযোগে ভাতার থানায় স্মারকলিপি দেন তাঁরা। পুলিশ ধরপাকড় করে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

ভাতার শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share:

আড়রা গ্রামে। ছবি: উদিত সিংহ

কারও ছেলে মদ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি করছে। কারও স্বামী বাড়ির চাল বিক্রি করে যাচ্ছে চোলাইয়ের ঠেকে। দিনরাত অশান্তি বাড়িতে। নিষেধ করলে জুটত মার। উনুনে হাঁড়ি চাপত না প্রায়ই।

Advertisement

ভাতারের আড়রা গ্রামের মহিলারা শেষে চোলাই ঠেক বন্ধের আন্দোলনে নামেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে চোলাই কারবারিদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে, এই অভিযোগে ভাতার থানায় স্মারকলিপি দেন তাঁরা। পুলিশ ধরপাকড় করে। কিন্তু এলাকায় চোলাই কারবার বন্ধ হয়নি। বাড়িতে-বাড়িতে অশান্তি চলছিলই।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল মহিলাদের। মরিয়া হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন এক দিন। গ্রামের ‘রক্ষাকালী স্বনির্ভর গোষ্ঠী’র সভানেত্রী ঝুমা ধারার কথায়, ‘‘আমরা সে দিন পুকুরঘাটে নানা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তখন শুনতে পাই, বড়বেলুন থেকে চোলাই নিয়ে গ্রামে ঢুকেছে এক জন। আমরা ৭-৮ জন বাগদি পাড়ায় ছুটে যাই। দেখি, একটি লোক দু’হাতে ঝোলা নিয়ে পাড়ার ভিতর ঢুকছে।’’ মহিলারা জানান, তাঁদের রণমূর্তি দেখে বেগতিক বুঝে লোকটি দৌড় দেয়। মহিলারা ধাওয়া করেন। ঝুমাদেবীর কথায়, ‘‘এক মদ বিক্রেতার বাড়ির দোতলায় উঠে কাপড়ের পুঁটুলিতে লুকিয়ে পড়ে সে। সেখান থেকে তাকে টেনে বার করে আনি আমরা। পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।’’

Advertisement

ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা জানান, সে দিনই পাড়ায় মদের ঠেকগুলি তুলে দেওয়া। চোলাই ফেলে বড়-বড় ড্রামগুলি ভেঙে দেওয়া হয়। মাস দুয়েক ধরে আড়রা গ্রামের বাগদি পাড়ায় মদের ঠেক নেই। তার পরেও যে রেহাই মিলেছে, তা নয়— জানাচ্ছেন মহিলারা। প্রতিমা বাগের কথায়, ‘‘বাগদি পাড়ায় ঠেক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অন্য গ্রামে তো ঠেক রয়েছে। সেখানে চোলাই খেয়ে এসে বাড়িতে অশান্তি করছে অনেকে।’’

মহিলাদের অভিযোগ, সংসারে টাকা দেওয়া দূর, নেশার জন্য বাড়িতে থাকা হাঁড়ির চাল থেকে পায়ের নূপুর পর্যন্ত বিক্রি করে দেয় পুরুষেরা। টিঙ্কু বাগ, শৈবা বাগেরা বলেন, ‘‘এই অশান্তির পরিবেশেই ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। রাতে চোখের পাতা এক করতে পারি না।’’ ঝুমাদেবী বলেন, ‘‘পাশের গ্রামগুলির ভাটি-ঠেক ভাঙতে সেখানকার মহিলাদের একজোট করছি। শীঘ্রই সেখানে হানা দেব।’’

ভাতারের মাহাচান্দা গ্রামের উপপ্রধান ভাগ্যধর চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই মহিলারা একটা ধাপ পার করেছেন। আরও অনেকগুলি ধাপ পেরোতে হবে। আমরা পাশে আছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement