প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গি আক্রান্ত রেখা দাস (৫০) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানাল পশ্চিম বর্ধমান স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার বারাবনির দোমহানির ঘটনা। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে, এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। সে সঙ্গে বাসিন্দাদের অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
বারাবনি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে দোমহানি বৈষ্ণবপাড়ার বাসিন্দা, রেখা জ্বর নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। দিন কয়েক ওষুধ খেয়েও তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এর পরে, বিভিন্ন উপসর্গের ভিত্তিতে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করান চিকিৎসকেরা। তার পরেই, জানা যায়, রেখা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। বিএমওএইচ (বারাবনি) নাসরিন জাহান বলেন, “মহিলার রক্ত পরীক্ষার পরে জানা যায়, তিনি ডেঙ্গি আক্রান্ত। তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুক্রবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়। কিন্তু শনিবার রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।”
এ দিকে, ডেঙ্গি আক্রান্ত ওই রোগী মারা যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে আসতেই রবিবার সকাল থেকে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাসিন্দারা এলাকা সাফ করার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থার দাবি জানান।
বিএমওএইচ অবশ্য জানিয়েছেন, মৃত্যুর খবর পেয়েই, রেখার বাড়িতে থাকা একমাত্র সদস্য, তাঁর দাদার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদেরও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হবে। কেউ জ্বরে আক্রান্ত কি না, তা জানতে আজ, সোমবার থেকে ওই এলাকায় বাড়ি-বাড়ি পাঠানোহবে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
বিডিও (বারাবনি) সৌমিত্রপ্রতিম প্রধান বলেন, “রবিবার সকালেই ওই ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর শুনেছি। এর পরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সকালে সাফাইকর্মী পাঠিয়ে নিকাশি ও আবর্জনা সাফ করা হয়েছে। প্রতিষেধক ছড়ানো হয়েছে।” তিনি জানান, এ দিন কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকায় পাঠিয়ে খোঁজখবর করা হয়। বিএমওএইচ-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, প্রতি দিনই নিয়ম করে এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে নতুন করে আর কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা দেখতে হবে। প্রতিদিনের রিপোর্ট বিডিও কার্যালয়ে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, জ্বরে কেউ আক্রান্ত হলে, দ্রুত তাঁর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্যও পরামর্শদেওয়া হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, বর্ষা এসে গিয়েছে। তাই বৃষ্টির স্বচ্ছ জমা জলে ডেঙ্গির মশার ডিম পাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তা রুখতে কোথাও যাতে বৃষ্টির জল জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্লকের সাফাই দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এলাকাবাসীকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, আসানসোল-দুর্গাপুরে ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। ২০১৯-এ আসানসোল পুরসভা এলাকায় প্রায় ৭৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। ২০২০-র জুলাইয়ে, করোনা-পর্বে জেলায় ১৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস পাওয়া গিয়েছিল। গত কয়েক বছরে দুর্গাপুর পুরসভা এলাকাতেও ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর দেখা পাওয়া গিয়েছে। দুই পুরসভা এলাকাতেই ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে গত কয়েক বছরে।