মসজিদপুর পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ
TMC

Agitation: কর দিলেই মিলবে ধান বিক্রির কুপন

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলিত খরিফ মরসুমে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ‘কাগজে-কলমে’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নভেম্বরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গলসি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পঞ্চায়েতের বকেয়া কর মেটালে তবেই মিলবে ধান বিক্রির কুপন। পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত মসজিদপুর পঞ্চায়েতের এমনই সিদ্ধান্ত ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকার চাষিদের মধ্যে। ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান চাষিদের একাংশ।

Advertisement

মসজিদপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সাধু রুইদাস বলেন, “পঞ্চায়েতের বকেয়া কর অনেকেই দিতে চাইছেন না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কর না মেটালে কুপন দেওয়া হবে না। তবে যাঁদের এখনই কর দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে করের শংসাপত্র ছাড়াই কুপন দেওয়া হচ্ছে।’’ যদিও বিডিও (গলসি ২) সঞ্জীব সেন বুধবার বলেন, “চাষিদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কর না দিলে কুপন মিলবে না, এমনটা করা চলবে না। প্রতিটি পঞ্চায়েতকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলিত খরিফ মরসুমে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ‘কাগজে-কলমে’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নভেম্বরে। ১ ডিসেম্বর থেকে চাষিদের ধান সরাসরি কেনা শুরু করা হবে। এখন সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কৃষকদের নাম নথিভুক্তকরণ এবং কবে, কোথায়, কত পরিমাণ ধান তাঁরা বিক্রি করবেন তা জানিয়ে কুপন বিলি চলছে।

Advertisement

২০১৯-’২০ সালে ধান বিক্রি করার জন্য যে সব কৃষক নাম নথিভুক্ত করেছিলেন, তাঁদের আর নতুন করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে না বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। কুপন দেওয়া হচ্ছে ‘সিপিসি’ (‌সেন্ট্রালাইজ়ড প্রোকিওরমেন্ট সেন্টার) থেকে। কিন্তু আগে থেকে নথিভুক্ত করা চাষিদের টোকেন গলসি ২ ব্লক প্রশাসন পঞ্চায়েত থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

‘সিপিসি’র বদলে পঞ্চায়েত থেকে কেন কুপন বিলি করা হচ্ছে? গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাসুদেব চৌধুরী বলেন, ‘‘ধান কেনার কাজ প্রশাসন পরিচালনা করে। তবে স্থানীয় ভাবে চাষিদের স্বার্থে আমরা জনপ্রতিনিধিরা কিছু সিদ্ধান্ত নিই। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সিপিসি-তে ভিড় কমানোর জন্য গত বছর থেকে পঞ্চায়েত থেকে কুপন বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ চাষিদের অভিযোগ, সে কুপন তুলতে গেলেই বকেয়া কর মেটানোর শংসাপত্র দেখতে চাইছে মসজিদপুর পঞ্চায়েত। মসজিদপুর পঞ্চায়েতের চাষি শেখ আসরফ আলি, ধনঞ্জয় মেটে বলেন, “সিপিসি থেকে বলা হচ্ছে, কুপন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতে। আর পঞ্চায়েতে কুপন তুলতে গেলে বলা হচ্ছে, আগে পঞ্চায়েতের বকেয়া কর মেটাতে। অথচ, সরকারের এমন কোনও নির্দেশই নেই।”

বিভিন্ন পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রতি বছর ভূমি ও বাড়ির সম্পত্তি কর, যানবাহন কর, স্বাস্থ্যবিধান ব্যবস্থার কর, জল সরবরাহের জন্য কর, পথবাতির কর ইত্যাদি ১৫ রকম কর নেওয়া হয়। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে বছরে ৪৮-৫২ টাকা কর বাবদ প্রাপ্য পঞ্চায়েতের। কিন্তু অনেকেই তা দিতে চান না। এর ফলে, পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলে টান পড়ছে। মসজিদপুর পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির আয়োজনের খরচ জোগাতে নাজেহাল অবস্থা তাদের। তাই বকেয়া কর আদায়ের জন্য কুপনকে ‘হাতিয়ার’ করেছে তারা।

একই অভিযোগ উঠেছে ওই ব্লকের আদড়া পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেও। তবে সেখানকার চাষিরা এখনও লিখিত অভিযোগ করেননি। আদড়া পঞ্চায়েতের সচিব সুব্রত মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েতে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজনীতির জলঘোলা শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক (বর্ধমান সদর) জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল সরকার কৃষকদরদি বলে দাবি করে। কিন্তু তারা যে কতটা কৃষক বিরোধী, এটাই তার প্রমাণ।” তৃণমূলের গলসি ২ ব্লক সভাপতি সুজন মণ্ডলের দাবি, ‘‘তৃণমূল কৃষকের পক্ষে বলেই গুরুত্ব দিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনছে। তবে কোনও পঞ্চায়েত ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ তিনি জানান, মসজিদপুর পঞ্চায়েতকে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement