Ausgram Library

গ্রামবাসীই খোলা রাখেন ৬৫ পার করা গ্রন্থাগার

রয়েছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির পাথর, খ্যাতনামা ব্যক্তিদের স্বাক্ষরের প্রতিলিপি-সহ নানা দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৭
Share:

গ্রামবাসীর সঙ্গে প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক। নিজস্ব চিত্র ।

নিয়মিত গ্রন্থাগারিক আসেন না বলে অভিযোগ। কয়েক জন গ্রামবাসী সন্ধ্যায় দু’ঘণ্টা চালু রাখেন আউশগ্রামের আলিগ্রাম নেতাজি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। তাঁদের সঙ্গ দেন প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬৫ বছর আগে গ্রামবাসীর উদ্যোগে গ্রন্থাগারটি তৈরি হয়। ১৯৮৩-এ সেটি গ্রামীণ গ্রন্থাগারের স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৪-এ গ্রন্থাগারিক পদে যোগ দেন সত্যনারায়ণ দত্ত। বছর দশ আগে তিনি অবসর নেন। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, হাতে লেখা তালপাতার পুঁথি-সহ প্রায় হাজার পাঁচেক বই, পত্রপত্রিকা রয়েছে সেখানে। রয়েছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির পাথর, খ্যাতনামা ব্যক্তিদের স্বাক্ষরের প্রতিলিপি-সহ নানা দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী। সত্যনারায়নবাবুর অবসরের পরে, ২০২১-এ গ্রন্থাগারের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন বর্তমান গ্রন্থাগারিক কল্যাণী টুডু। মাঝে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী গ্রন্থাগার চালিয়েছিলেন।

এখন নিয়মিত গ্রন্থাগারে আসনে পারেন না কল্যাণী। তিনি বলেন, ‘‘আমি অন্য একটি গ্রন্থাগারের পূর্ণ সময়ের দায়িত্বে রয়েছি। পাশাপাশি, আউশগ্রামের ওই গ্রন্থাগারের অস্থায়ী দায়িত্বও রয়েছে। জেলা দফতরেও কিছু কাজও করতে হয়। সে কারণে আউশগ্রামের ওই গ্রন্থাগারে নিয়মিত যেতে পারি না। বিষয়টি পরিচালন কমিটি জানে। তারা গ্রামবাসীর উদ্যোগে গ্রন্থাগার চালু রাখার দায়িত্ব নিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা গৌরচন্দ্র কোনার, মুক্তিপদ পান, বিবেকানন্দ পালদের অভিযোগ, “আগে গ্রন্থাগার খুবই উন্নতমানের ছিল। পাঠক সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল। সত্যনারায়ণবাবুর অবসরের পরে অবস্থা শোচনীয় হতে থাকে। সময় মতো খোলা না হওয়ায় সেখানে তালা পড়েছিল।” কৃষ্ণগোপাল চট্টোপাধ্যায়, গদাধর ভট্টাচার্যের মতো পাঠকদের দাবি, “আগে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। এখন সে সব বন্ধ”। বছর খানেক ধরে সমীরণ লাহা, স্বপন কোনার, মোহন পাল-দের মতো স্থানীয়েরা সন্ধ্যায় ঘণ্টা দুই খোলা রাখেন গ্রন্থাগার। সেটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন সত্যনারায়ণ। সম্প্রতি তিনি কয়েক জন গ্রামবাসীকে নিয়ে গ্রন্থাগার সাফাইয়ে উদ্যোগী হন। বিডিও-র কাছে সেটিকে আগের অবস্থায় ফেরানোর আর্জি জানান।

Advertisement

গ্রন্থাগার পরিচালন কমিটির সম্পাদক আশিস নায়েক বলেন, “গ্রন্থাগারের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি মাঝেমধ্যে আসেন। বই পড়ার প্রবণতা কমছে। গ্রামবাসী সন্ধ্যায় ঘণ্টা দুই গ্রন্থাগার খুলে রাখেন গ্রামের কয়েক জন। তখন মানুষ পত্রপত্রিকা পড়েন। অনেকে বই নেন।”

ওই গ্রামের বাসিন্দা আউশগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গ্রন্থাগারের কয়েকটি থামে ফাটল ধরেছে। ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। দেওয়ালে নোনা ও বিভিন্ন জায়গায় উইপোকা ধরছে। অনেক মূল্যবান বইপত্র রয়েছে এখানে। সেগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছি।”

সত্যনারায়ণ বলেন, “ওই গ্রন্থাগারে ৩০ বছর কাজ করেছি। গ্রাম, সেখানকার মানুষ এবং গ্রন্থাগারের টানে এখনও ছুটে আসি।” বিডিও (আউশগ্রাম ১) শেখ কামরুল ইসলাম বলেন, “গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেছি। পরিকাঠামোগত সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করা হবে।” পূর্ব বর্ধমান জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক নির্মাল্য অধিকারী বলেন, “কর্মীসংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়ায় পরিচালন কমিটিকে উদ্যোগী হয়ে গ্রন্থাগার খুলে রাখতে বলা হয়। তাতে পাঠকেরা উপকৃত হবেন।” সত্যনারায়ণের উদ্যোগ নিয়ে তিনি জানান, “এই উদ্যোগকে
সাধুবাদ জানাই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement