বাড়িতে ফাটল বিলপাহাড়িতে।
খনিতে বিস্ফোরণের জেরে ফাটল ধরছে বাড়িতে। এই পরিস্থিতিতে পাণ্ডবেশ্বরের বিলপাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা দ্রুত পুনর্বাসন দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি খোলামুখ খনিতে বিস্ফোরণের জেরে ফাটল ধরেছে ৫০টি বাড়িতে।
পাণ্ডবেশ্বরের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিলপাহাড়ি গ্রামটি। এর পাশেই চলছে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ। প্রায় দু’দশক আগে এই খনিটি চালু হয়েছিল। মাস তিনেক আগে সম্প্রসারিত হওয়ায় তা বিলপাহাড়ি গ্রাম থেকে মাত্রা ৭০ মিটার দূরত্বে চলে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী জানান, দু’শো পরিবার এই গ্রামে থাকেন। তাঁদের দাবি, খনিতে বিস্ফোরণের জেরে গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়িতে ফাটল ধরেছে। স্থানীয় বাসিন্দা পাণ্ডব ঘোষ, কুমারেশ দেওয়াসি, বিদ্যুৎ দেওয়াসিরা জানান, তাঁদের বাড়ির নানা অংশে ফাটল ধরেছে। তাঁদের অভিযোগ, অবৈজ্ঞানিক ভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এর ফলে প্রতি বার বিস্ফোরণে বাড়ির বাসনপত্র কাঁপছে। এমনকি, নিশ্চিন্তে খেতেও বসা যাচ্ছে না। গ্রামেরই বাসিন্দা, ইসিএলের কর্মী জীবনকুমার কবিরাজ বলেন, “বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য খোট্টাডিহি গ্রামের পাশে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ শুরু করা হয়নি। সংস্থার তরফে সেখানে বাড়ি করার জন্য অর্ধেক পরিবারকে এক কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চিহ্নিত জায়গায় এ পর্যন্ত কোনও কাজ শুরু হয়নি। কে কত জমি পাবেন, সেই নকশাও তৈরি হয়নি।’’ জীবনবাবুর দাবি, তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংস্থার পাণ্ডবেশ্বর এরিয়া কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রতিকারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু, অভিযোগ, তাতে সাড়া মেলেনি।
পাণ্ডববাবুর অভিযোগ, তিনি কোনও টাকাই পাননি। তাঁদের দাবি, পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত জায়গায় মাপজোক করে বাড়ি তৈরির জন্য প্রত্যেককে পুরো টাকা দেওয়া হোক। পাণ্ডববাবুর আশঙ্কা, ‘‘দ্রুত পুনর্বাসন দেওয়া না হলে যে কোনও দিন দেওয়াল চাপা পড়ে মরতে হবে।’’
তৃণমূলের হরিপুর অঞ্চল সভাপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ কবিরাজের অভিযোগ, খোলামুখ খনি সম্প্রসারণের আগেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে বিষয়ে কোনও হেলদোল নেই ইসিএলের।
শুধু বাড়িতে ফাটলই নয়, অন্য বেশ কিছু সমস্যাও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁরা জানান, খনির জেরে বিলপাহাড়ি গ্রামের ২৯টি চাপাকলের ২৮টিতেই আর জল পড়ে না। শুকিয়ে গিয়েছে কুয়ো। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীকে পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জল ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথবা, জল কিনে খেতে হচ্ছে। কিছু বাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল তোলা হয়। পড়শিরা প্রয়োজনে ওই সমস্ত বাড়ি থেকেই জল নিচ্ছেন। কিন্তু গ্রীষ্মে সেই জলও মিলবে না বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীর।
বিষয়টি নিয়ে ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর পুনর্বাসনের জায়গা চিহ্নিত করা গিয়েছে। দ্রুত সেই প্রক্রিয়াও চলছে।’’