আগ্নেয়াস্ত্র হাতে (চিহ্নিত) ঘোরাফেরার এই ছবিই সামনে এসেছে। নিজস্ব চিত্র
এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাদা কাপড়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি। বিজেপির যুব মোর্চার পুরসভা অভিযানে পুলিশের সঙ্গে গোলমাল চলার সময়ে ভিড়ের মধ্যে এই ছবি দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আসানসোলে। আরও অভিযোগ, ওই ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তেও দেখা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) ছড়িয়ে পড়ার পরে এ নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলে।
উন্নয়নমূলক কাজে বৈষম্য ও কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তুলে শুক্রবার ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার পুরসভা অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আসানসোল। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এই ঘটনায় দশ জন যুব মোর্চা কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার আসানসোল আদালতে তোলা হয় ধৃতদের। গ্রেফতারির প্রতিবাদে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজেপি।
মুখ ঢেকে রাস্তায় দাপাদাপি করা ব্যক্তির ভিডিয়ো শনিবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে তর্জা শুরু হয়ে যায়। আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় টুইট করে অভিযোগ করেন, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যুব কর্মীদের পুরসভা অভিযান বানচাল করতে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে। বাবুলের অভিযোগ, ‘‘আসানসোলে শুক্রবার যা ঘটেছে তার জন্য দায়ী পুলিশ এবং তৃণমূল। পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। আমাদের আহত কর্মীদের হাসপাতালের বাইরে থেকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিন রাজ্যের কোথাও না কোথাও এমন ঘটছে।’’ শনিবার আসানসোলে একটি কর্মসূচিতে এসে রাজ্য বিজেপির নেতা সায়ন্তন বসুও অভিযোগ করেন, ‘‘শুক্রবার জিতেন্দ্র তিওয়ারির নেতৃত্ব পুলিশের সহযোগিতায় তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের যুব কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। স্বস্তির বিষয় কারও গায়ে গুলি লাগেনি।’’
বিজেপির এই সব অভিযোগ উড়িয়ে আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আসানসোলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অশান্তি ছড়াতে বিজেপি ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে বোমাবাজি করেছে, গুলি চালিয়েছে।’’ রিভলবার হাতে দাপিয়ে বেড়ানো ব্যক্তি কোন পক্ষের, তা জানা যায়নি। তবে এই ধরনের ঘটনায় শহরের সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁদের অনেকে।
ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত অবশ্য জানান, শুক্রবারের ঘটনায় গুলি চালানোর কোনও খবর নেই। শনিবার সকালেও আসানসোল বাজারে জিটি রোডে ঘটনাস্থলে ইট-পাথর, জুতো ছড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে। পুরসভা অভিযানে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের উপরে হামলা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে দশ জন বিজেপি যুব কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার তাদের আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ধৃতদের সমর্থনে আদালত চত্বরে জড়ো হন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা।