বুলডোজ়ারে ভাঙচুর। আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
বুলডোজ়ার নিয়ে অভিযান, জিটি রোডে অবরোধ, বাধা দিতে গিয়ে দেওয়াল চাপা পড়া, বুলডোজ়ারে ভাঙচুর, বিক্ষোভ— শুক্রবার পুরনিগমের উচ্ছেদ ঘিরে এমন নানা ঘটনায় ধুন্ধুমার বাধল আসানসোলে। এ দিকে, বিজেপির তরফে দাবি, উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
গত বছর আসানসোল পুরনিগমের বোর্ড-বৈঠকে শহর জুড়ে সরকারি জমিতে থাকা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অতীতে এই অভিযান চালাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুরনিগম। বন্ধ করে দিতে হয় অভিযান। এমন নানা টানাপড়েনের মধ্যে শুক্রবার সকাল থেকে বুলডোজ়ার নিয়ে ফের অভিযানে নামেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে গির্জা মোড় থেকে অভিযান শুরু করে পুরনিগম। হকার্স মার্কেটের অবৈধ ছাউনি, রাস্তার পাশের অস্থায়ী ঝুপড়িগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মিনিট ৪৫ অভিযান চলার পরে ‘দখলকারেরা’ বিক্ষোভ শুরু করেন। অনেকেই বুলডোজ়ারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের জন্য অভিযান থমকে যায়। তবে তার পরেও, কিছুক্ষণ পরে ফের শুরু হয় অভিযান। এর পরে, দুপুর ১২টা নাগাদ এক দল ‘দখলদার’ গির্জা মোড় ও লোকো ট্যাঙ্কের মাঝখানে জিটি রোড অবরোধ শুরু করেন। প্রায় ১৫ মিনিট অবরোধ চলার পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামেনি। পুরনিগমের প্রতিনিধিরা কিছুক্ষণের জন্য অভিযান বন্ধ রেখে দখলদারদের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। দুপুর আড়াইটা থেকে ফের অভিযানশুরু হয়।
এ দিকে, বিক্ষোভকারীদের একাংশের অভিযোগ, আগাম না জানিয়েই এই অভিযান। সদ্য ভাঙা দোকানের সামনে কাঁদছিলেন সুরেশ রজক। তিনি বলেন, “৩০ বছর দোকান করছি। সংসারের খরচ এই দোকানের আয় থেকেই হয়। এ বার পথে বসলাম। বিকল্প ব্যবস্থা না করে কেন দোকান ভাঙা হল?” হকার্স মার্কেটের দোকানদার পুরাণি প্রসাদ দোকানের সামনের কিছু অংশে লোহা ও টিনের ছাউনি দিয়েছিলেন। এ দিন সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি তো পুরনিগমকে উপযুক্ত কর দিয়ে পুরনিগমেরই দেওয়া মার্কেটে ব্যবসা করছি। সামান্য একটু ছাউনি দিয়েছিলাম। আগাম নোটিস না দিয়ে সেটা ভেঙে দেওয়া হল।” পাশাপাশি, গির্জা মোড়ের মহম্মদ খুরশিদের অভিযোগ, “ফুটপাত দখল করে কিছু লোক ব্যবসা করায় হাটন রোড, আসানসোল বাজার, স্টেশন রোড মোড়ে যানজট হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন মানুষ। সেখানে অভিযান না চালিয়ে ফাঁকা জায়গায় দোকান ভাঙা হল।”
এ দিন লোকো ট্যাঙ্কের কাছে অভিযানের সময় আচমকা চারটি দোকানে আগুন ধরে যায়। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দোকানগুলি পুড়ে গিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট মালিকেরা। দোকানের জিনিসপত্রগুলি আগেই বার করে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। হতাহতের খবর নেই। পুড়ে যাওয়া একটি দোকানের মালিক মহম্মদ রিয়াজউদ্দিনের বক্তব্য, “শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন ধরতে পারে।” এ দিকে, ওই এলাকাতেই বেসরকারি ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশেনর একটি কার্যালয় ভাঙার সময়ে বাধা দিতে গিয়ে এক ব্যক্তি দেওয়াল চাপা পড়েন। পুরকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠান। ওই ব্যক্তির একটি পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এর পরেই স্থানীয়দের একাংশ, বুলডোজ়ারে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, অভিযানের নেতৃত্বে থাকা পুরসভার এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আরকে শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, “প্রায় এক মাস আগে প্রত্যেক দখলদারকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করা হয়েছে। ফলে অভিযান চালাতেই হত। পুর-এলাকার যেখানেই সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ তোলা হয়েছে, সেখানেই অভিযান হবে।”
এ দিকে, শহর সাজিয়ে তুলতে উচ্ছেদকে সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু যাঁরা দোকান হারিয়েছেন বা যাঁদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের জন্য বিকল্পের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। দলের আসানসোল সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা পুরসভারই কাজ। আমাদের দাবি, দখলদারদের জন্য বিকল্প বাজারের ব্যবস্থা করা হোক।” মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “নিয়মের মধ্যে থাকা সব বিষয়ই ভেবে দেখা হবে।”