এমন বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিল বহু এটিএম। নিজস্ব চিত্র।
মাসের প্রথম দিন। অনেকের অ্যাকাউন্টে বেতন জমা পড়েছে। অনেকের পেনশন। কিন্তু সেই টাকা ইচ্ছে মতো তোলার উপায় নেই। বৃহস্পতিবারও নগদের জোগানের অভাবে জেরবার হতে হল গ্রাহকদের। বন্ধ রইল অনেক এটিএম-ও। যেগুলি খোলা ছিল তার প্রায় সব ক’টিতেই মিলেছে দু’হাজার টাকার নোট। গ্রাহকদের অনেকেরই ক্ষোভ, মাসের গোড়ায় নানা খরচ মেটাতে এই নোট বিশেষ কাজে লাগবে না। তাই থেকেও যেন নেই টাকা।
এ দিন সকাল থেকে বেতনের টাকা তুলতে ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রায় কোনও ব্যাঙ্ক থেকেই দশ হাজার টাকার বেশি মেলেনি। তাতে সমস্যা মিটবে না বলে দাবি করেন ব্যাঙ্ক ফেরত লোকজনের একাংশ। ইস্পাতনগরীর এ-জোনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বেতনের টাকা তুলতে এসেছিলেন জামগড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুভাশিস দে। ব্যাঙ্ক থেকে দশ হাজার টাকা পেলেন। তিনি জানান, ছেলের পড়াশোনার জন্য ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে শুক্রবারের মধ্যে। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে আর টাকা পাওয়া গেল না। এখন বাইরে কারও কাছে ধার নিতে হবে। কিন্তু টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’’
দুর্গাপুর শহরের বেশ কিছু এটিএমে এ দিন ঝাঁপ বন্ধ ছিল। খোলা এটিএমে দু’হাজার টাকার নোট মেলায় গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কে লাইন দেন। অভিজিৎ ভট্টাচার্য, তপন মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘এক বার ব্যাঙ্কে এলে সারা দিন নষ্ট হচ্ছে। এটিএম থেকে টাকা পাওয়া গেলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।’’ এ দিন শহরের গ্যামন ব্রিজ, দুর্গাপুর স্টেশন, এসবি মোড়, গ্যারাজ মোড়, ডিসিএল মোড়, সিটি সেন্টারের বেশ কয়েকটি এটিএমে কোনও টাকা ছিল না। সিটি সেন্টারের দেবাশিস দাস, স্বদেশ রায়েরা জানান, বাজারে কোনও দোকানে দু’হাজার টাকার নোট দিলে খুচরো পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই দু’হাজার টাকার নোট নিতে মানুষের তেমন আগ্রহ থাকছে না।
পাণ্ডবেশ্বরের বাঁকোলা খনি এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক অজয়কুমার সিংহ জানান, তিন দিন পরপর এই ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা পাননি। তিন দিনই দুপুরের পর ‘নো-ক্যাশ’ বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন তাই তিনি সকাল-সকাল লাইনে দাঁডিয়ে ছিলেন। অবশেষে টাকা পেলেন। আর এক বাসিন্দা প্রদীপ সামন্ত জানান, দশ হাজার টাকা পেয়েছেন, সবই দু’হাজার টাকার নোটে। ভেবে পাচ্ছেন না, খুচরো মিলবে কোথা থেকে। ব্যাঙ্কের আর গ্রাহক গোরিলাল রাজবংশীর অভিযোগ, “আমাদের ২ হাজার আর পাঁচশো টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ, এলাকায় অনেককে অনায়াসে একশো, পঞ্চাশ, এমনকী ১০ টাকার বান্ডিল নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখছি। ব্যাঙ্ককর্মীরা আমাদের কথা শুনছেন না।’’
আসানসোল আপকার গার্ডেনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক গ্রাহক জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, দুপুর ১২টার আগে এলে ১০ হাজার টাকা তুলতে পারবেন। তার পর এলে ৫ হাজার টাকার বেশি মিলবে না। সে জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
মাসের শুরুতে তাই বেতন মিললেও তা অনেকের কাছে রয়ে গেল খাতায়-কলমেই।