বিরল রোগ (হার্লিকুইন ইকথিওসিস) নিয়ে জন্মানো এক সদ্যোজাতকে শোয়ানো হয়েছে মায়ের গায়ের উপরে। শিশুর চেহারা স্বাভাবিক নয়। সরকারি হাসপাতালের লেবার-রুমের সেই দৃশ্য ভিডিও আকারে ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে স্বাস্থ্য দফতর।
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর হাসপাতালের ওই ঘটনায় প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ পেয়ে লেবার রুমে’ উপস্থিত দুই নার্স ও কর্তব্যরত দু’জন ডাক্তারকে শো-কজ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বিশদে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৮ জুন বিরুডিহার এক বধূ হাসপাতালে শিশুটির জন্ম দেন। জন্মের এক দিন পরে মারা যায় শিশুটি। অভিযোগ, প্রসবের পরেই এক মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি ভি়ডিও করা হয়। ভিডিও-তেই দেখা যাচ্ছে, সাদা গ্লাভস পরা আর একটি হাতও মোবাইলে শিশুটির ভিডিও তুলছে। শিশুটি হাত-পা নাড়ছে। তার মা-র কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, শিশুর জন্মের আগে নিয়মিত ডাক্তার দেখানো হয়েছিল কি না।
৯ জুন থেকে ভিডিওটি ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছে। পরে ১০ জুন নিউ টাউনশিপ থানায় স্ত্রী এবং পরিবারের ‘সম্মানহানি’র অভিযোগ করেন প্রসূতির স্বামী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার বাচ্চার অদ্ভুত চেহারাই যদি ভিডিও করার কারণ হয়, তা হলে অনুমতি চাওয়া যেতে পারত। তা না করে, সদ্য প্রসব করা আমার স্ত্রী-র চেহারাটাও তুলে দেওয়া হল ভিডিও-য়। এটা কোন ধরনের সভ্যতা!’’
বিষয়টি জেনে জরুরি বৈঠক ডেকে হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাসকে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্খ সাঁতরা। শঙ্খবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এমন অমানবিক কাজে যুক্ত কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’ তিনি জানান, যাঁর মোবাইল থেকে ভিডিওটি প্রথম ‘শেয়ার’ করা হয়েছে, তাঁকে চিহ্নিত করে সাইবার ক্রাইমের ধারায় মামলা করতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, লেবার রুমে উপস্থিত দু’জন নার্স এবং একটি বেসরকারি নার্সিং স্কুলের দুই শিক্ষানবিশ এতে জড়িত। ওই দুই শিক্ষানবিশ ‘নার্সিং-ইন্টার্ন’ হিসেবে হাজির ছিলেন প্রসবের সময়ে। ওই দু’জনকে ‘সাসপেন্ড’ করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নার্সিং স্কুল কর্তৃপক্ষকে। অভিযুক্ত দুই সরকারি নার্সের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।