Raju Jha Murder Case

ডাক্তারের সাক্ষ্যে শুরু রাজু খুনের বিচার

মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতের অতিরিক্ত ও দায়রা বিচারক (পঞ্চম) দেবশ্রী হালদারের এজলাসে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হয়। ওই চিকিৎসক ছাড়াও গোপন জবানবন্দি নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেটও এ দিন সাক্ষ্য দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৯
Share:

রাজু ঝা। —ফাইল চিত্র।

সাধারণ প্রথার বাইরে বেরিয়ে, ময়না-তদন্ত করা চিকিৎসকের সাক্ষ্যের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল রাজু ঝা খুনের মামলায়। সাধারণত মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় অভিযোগকারী বা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে। তাতে বিচার প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া প্রত্যেকে ঘটনার গতিপ্রকৃতি জেনে নিতে পারেন। সেই বুঝে প্রশ্নমালা তৈরি করেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। তবে কয়লা কারবারি রাজু খুনের মামলায় তার বাইরে গিয়ে, মামলার শেষ দিকে সাক্ষ্যগ্রহণকারী হিসেবে চিহ্নিত থাকা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দেবাশিস সরকারের সাক্ষ্য নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলেন মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতের অতিরিক্ত ও দায়রা বিচারক (পঞ্চম) দেবশ্রী হালদারের এজলাসে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হয়। ওই চিকিৎসক ছাড়াও গোপন জবানবন্দি নেওয়া ম্যাজিস্ট্রেটও এ দিন সাক্ষ্য দেন।

২০২৩-এর ১ এপ্রিল শক্তিগড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে গাড়িতে বসে থাকার সময়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন রাজু। তদন্তে জেলা পুলিশ ১২ জনের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে। পুলিশ প্রথমে দুর্গাপুর থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে। সেই সূত্র ধরে বিহারের বৈশালীর লালবাবু কুমার, মুকেশ কুমার ও পবন কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১৪ জুলাই চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার। পুলিশ জানায়, চার্জশিট পেশের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নদিয়ার রানাঘাটে একটি সোনার বিপণিতে ডাকাতি করতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বিহারের বৈশালীর কুন্দন যাদব। পুলিশের দাবি, কুন্দনই রাজুকে কাছ থেকে গুলি করেছিল বলে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। এর পরেই খুনের মামলায় কুন্দনকে গ্রেফতার করে শক্তিগড় থানার পুলিশ। এ দিন ওই চার জনের বিরুদ্ধেই সরাসরি খুনের অভিযোগে চার্জ আনা হয়েছে।

Advertisement

২০ মে ধৃত ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। ধৃতদের মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র আইন, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চার্জ গঠন হয়েছে। বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ৭ এমএম পিস্তল থেকে রাজুকে খুন করা হয়। ঘটনার পরে, শক্তিগড় থেকে সাদা রঙের এসইউভি-তে আততায়ীরা পালিয়ে গেলে,ও সেই গাড়িটির খোঁজ এখনও মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। পুরনো ব্যবসায়িক সূত্রে রাজুকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে, দাবি তদন্তকারীদের। আইনজীবীরা জানান, সেই পিস্তল ও সাদা রঙের গাড়ির খোঁজ পুলিশ পায়নি।

আইনজীবীরা জানান, প্রায় ২,৬০০ পাতার নথি-সহ চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছিল। খুনে জড়িতদের মধ্যে সব কথাবার্তা হয়েছে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে। দুর্গাপুর থেকে কয়লা কারবারিকে নজরে রাখা, খুনের পরে পালানোর রাস্তাও দুষ্কৃতীরা খুঁজেছিল জিপিএস পদ্ধতিতে। তাই আইনজীবীদের ধারণা, পুরো মামলা দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল ডিটেল রেকর্ড’ বা আইপিডিআর এবং বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের প্রযুক্তির উপরে। সেখানে অভিযোগকারী বা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য না নিয়ে ব্যতিক্রম ঘটানো হল কেন? সাইবার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে পরিচিত বিভাস চট্টোপাধ্যায় এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর বিপক্ষে থাকা আইনজীবী কমল দত্ত, মোল্লা মহতাবউদ্দিনদের দাবি, “সরকারি আইনজীবী যে কোনও সাক্ষীকে ডেকে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। তবে চিরাচরিত প্রথা হল, অভিযোগকারীকে প্রথম সাক্ষ্য হিসেবে পেশ করা। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করার অর্থ, বিভ্রান্তি তৈরি করা। কিংবা, অভিযোগকারীর বক্তব্যে সরকারি আইনজীবীর মনেই প্রশ্ন রয়েছে। তবে প্রয়োজনে আমরা ফের সাক্ষীকে আদালতে ডাকতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement