স্কুলের পোশাক তৈরি, নানা শিল্পকর্ম শপিংমলে সরবরাহ থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি— বিভিন্ন উপায়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে লাভজনক করে তোলায় উদ্যোগী হচ্ছে নতুন জেলা প্রশাসন। সব গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। তাতে আশার আলো দেখছেন পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকতে থাকা গোষ্ঠীগুলির সদস্যেরা।
২০১৪ সালে রাজ্যে স্বনির্ভর সহায়ক প্রকল্পগুলি ঢেলে সাজা হয়। ব্যাঙ্ক ঋণে সুদের হার কমিয়ে প্রধানত মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করার কথা ভেবেই এই প্রকল্প শুরু হয়। কিন্তু পরিকল্পনা সে ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। দুর্গাপুরের পুরসভায় গড়ে ওঠা দু’শোর বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীও ঝিমিয়ে পড়ে। নতুন জেলা ঘোষণার পরে উন্নয়নমূলক কাজের প্রথম পর্যায়ে মেয়েদের স্বনির্ভরতার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সমস্ত গোষ্ঠী এবং পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতর ও কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্খ সাঁতরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আলোচনায় উঠে নানা সমস্যা ও তার সমাধানের পথ উঠে এসেছে। পরিকল্পিত উপায়ে কী ভাবে গোষ্ঠীগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত, বাজারের ব্যবস্থা সবই পরিকল্পনামাফিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শহরের আশপাশের নানা গ্রামে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে তাঁদের এলাকার স্কুল বা ক্লাবে। ফলে, তাঁদের যাতায়াতের খরচ ও সময়, দুই-ই বাঁচবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক গোষ্ঠীর মেয়েদের তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া হাতের নানা কাজ শেখানো হবে। সেই সমস্ত শিল্পকর্ম এলাকার বিভিন্ন শপিংমলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়়া মেয়েদের স্কুলে ভেন্ডিং মেশিন দেওয়া হবে, যেখানে কম টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের জোগান দেবে গোষ্ঠীর মেয়েরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক শঙ্খবাবু বলেন, ‘‘কম দামের স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে পুরুলিয়ায় গোষ্ঠীর মহিলারা লাভের মুখ দেখেছেন। এ ছাড়াও আমরা নানা ভাবে উদ্যোগী হব। সব গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় এনে পরিকল্পনা করে এগোনো হবে।’’
সরকারি উদ্যোগে খুশি গোষ্ঠীগুলি। একটি গোষ্ঠীর সদস্য দীপা সিংহ, কুসুম বাদ্যকর, পুষ্পরাণি পালেরা জানান, তাঁরা চিঁড়়ে, মুড়ি, বড়়ি ইত্যাদি তৈরি করেন। বরাত পেলে কাজ করেন। তাঁরা বলেন, ‘‘সরকার এগিয়ে এলে আশা করি আমাদের বরাতের পরিমাণ বাড়বে। ফলে, বেশি লাভ হবে।’’ বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজের তদারকি করেন দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) লাভলি রায়। তিনি বলেন, ‘‘শহরাঞ্চল ছাড়াও গ্রামে বহু গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। সরকারি সাহায্য পেলে সব গোষ্ঠীরই সুবিধে হবে।’’