কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির প্রতিবাদ বর্ধমানের কার্জন গেট চত্বরে। নিজস্ব চিত্র।
এ বার গরমে দেশের পর্যটন মানচিত্র থেকে কাশ্মীর কার্যত বাদই চলে গেল, এমনই দাবি করছে জেলার পর্যটন সংস্থাগুলি। সকলেরই দাবি, পহেলগামের কাছে বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি-হানায় ২৭ জনের মৃত্যুর রেশ কাটতে অনেকটা সময় লাগবে। এত সহজে মিটবেও না অশান্তি। এই পরিস্থিতিতে সংস্থাগুলি পর্যটকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি নিতে নারাজ। পর্যটকেরাও আপাতত কাশ্মীরমুখী হতে চাইছেন না। এ দিকে, সদ্য বৈসরন ঘুরে আসা পর্যটকদের একাংশের দাবি, পহেলগাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উঁচুতে বৈসরন। জঙ্গলে ঘেরা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা সম্পূর্ণ অসুরক্ষিত। সেখানে জঙ্গি-হানা হলে কী হবে, এটা তাঁদের অনেকেরই ভাবনায় এসেছিল।
মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামের অনাদিপ্রসাদ রায় বলেন, “পহেলগামে সিআরপিএফের পোস্ট আছে। কিন্তু পহেলগাম থেকে বৈসরন যাওয়ার দুর্গম রাস্তায় সেনাদের দেখা যায়নি। ঘোড়ায় করে বৈসরন গিয়েছিলাম, সেখানেও সেনারা ছিল না। আমি এক সিআরপিএফের কাছে জানতেও চেয়েছিলাম বিষয়টা। বলা হয়েছিল, পাহাড়ের পিছনে বিএসএফ আছে। চিন্তার কিছু নেই। বাড়ি ফেরার পরেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানা দেখে বুক কেঁপে উঠল।” কাটোয়ার ঘুটকিয়া পাড়ার টোটন ঘোষেরও একই দাবি। বর্ধমানের জয়দীপ পাঁজারও দাবি, “আমরা কিছু দিন আগে বৈসরন গিয়েছিলাম। কেন জানি না, পহেলগামকে সুরক্ষিত লাগেনি।”
জয়দীপের ভাই শান্তনু পাঁজা পর্যটন-ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “আর কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল। বাতিল করে দিয়েছি।’’ তাঁর আরও দাবি, পর্যটকদের জন্য গোটা দেশ খোলা রয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষের কাছে কাশ্মীর ছাড়া আর কোনও পথ নেই। পর্যটনে ক্ষতিটা তাঁদের অনেক বেশি হল। কাটোয়ার সঞ্জয় দাস ফি বছর দু’বার পর্যটকদের নিয়ে কাশ্মীরে যান। গত সপ্তাহে কাশ্মীর থেকে একটি দল ফিরেছে। তিনিও বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তা আগে। কাশ্মীর যাব না বলে ঠিক করেছি।” কলকাতার একটি পর্যটন সংস্থার সঙ্গে মে মাসে কাশ্মীর যাওয়ার কথা ছিল ব্যাঙ্ক কর্মী মানস মণ্ডল ও স্কুল শিক্ষিকা মহাশ্বেতা ঘোষদের। তাঁদের কথায়, “অশান্ত আবহাওয়ার মধ্যে কাশ্মীর যাওয়ার প্রশ্নই নেই। সব সময় চিন্তা থাকবে।’’
প্রায় ন’বছর আগে অমরনাথ যাত্রার সময় কাশ্মীরের পহেলগামে গিয়েছিলেন বর্ধমানের আর্যপল্লীর উজ্জ্বল রায়চৌধুরী। হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ইয়ানির মৃত্যুর ঠিক পরেই কাশ্মীর তখন উত্তাল। পহেলগামে হোটেলের সামনে পাথর-বৃষ্টি দেখেছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে অমরনাথ যাওয়ার পথে টাকা, ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছিলেন উজ্জ্বল। ব্যাগে ছিল নগদ ১২ হাজার টাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার পরিচিতিপত্রের মতো দরকারি কাগজপত্র। এক দিকে মৌনী মিছিল, অন্য দিকে বিক্ষোভে ব্যাগ ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তবে পুলিশের কাছে ডায়েরি করেন তিনি। অনন্তনাগ জেলার পহেলগাম ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল সালাম টাকা-সহ ব্যাগ বর্ধমানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আব্দুল সালাম বলেছিলেন, ‘‘পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, পর্যটকদের ক্ষতি হলে গোটা কাশ্মীরের বদনাম।” সদ্য কাশ্মীর থেকে ফেরা কাটোয়ার শিপ্রা বিশ্বাস কিংবা পহেলগ্রাম থেকে ফেরার পথে বর্ধমানের তৃণমূলের কাউন্সিলর মিঠু সিংহ সরকার বলেন, “ওখানকার স্থানীয় লোকজন পর্যটকদের সঙ্গে খুবই ভাল ব্যবহার করেন। কারণ তাঁরা জানেন, তাঁদের অর্থনীতি পর্যটকদের উপরেই নির্ভরশীল।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে