কালনায় বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
‘কাটমানি’ ফেরত চেয়ে মারধর, বিক্ষোভে জুড়ল কালনাও। মঙ্গলবার কালনার বৃদ্ধপাড়া গ্রামে আটঘোরিয়া সিমলন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, সুপারভাইজার ও এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। পরে মারামারিতে জখম হন এক তৃণমূল নেতা ও এক বিজেপি কর্মী। তৃণমূলের দাবি, কাটমানির নামে হিংসা ছড়াচ্ছে বিজেপি। বিজেপির পাল্টা, গ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ তৃণমূল কর্মী তথা ঠিকাদার অমিত সরকারের বাড়িতে চড়াও হন। তাঁদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, সরকারি প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির নামে টাকা নিয়েছেন ওই নেতা। দুপুর ১টা নাগাদ কালনা হাসপাতালে মাথায় চোট নিয়ে দেখা যায় অমিতবাবুকে। তাঁর দাবি, ‘‘আমি বলেছিলাম প্রমাণ দেখাতে পারলে কাটমানির টাকা ফেরত দিয়ে দেব। কথা না শুনেই বিজেপির এক দল লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে।’’ পরের ‘হামলা’ হয় একশো দিনের কাজের সুপারভাইজার বিকাশ হাজরার বাড়িতে। তবে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাওয়ার আগেই কালনা থানা এবং বুলবুলিতলা ফাঁড়ির পুলিশ এসে পৌঁছয়। গ্রামবাসীদের দাবি, সরকারি কাজের জন্য টাকা নিয়েছেন সুপারভাইজারও। শেষে বিক্ষোভ হয় তৃণমূলের উপপ্রধান গোপেশ্বর মণ্ডলের বাড়িতে। গ্রামবাসীদের দাবি, ঘর দেওয়ার নাম করে ৪ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। শৌচাগারের জন্য ১-২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকি, জমির সমস্যা মেটানোর জন্যও ৫০ হাজার টাকা কাটমানি নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন বিক্ষোভকারীদের এক জন। তাঁদের দাবি, কার কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হয়েছে তার হিসেব করা হচ্ছে। সব ফেরত নেওয়া হবে। উপপ্রধান যদিও অভিযোগ মানেননি।
বিক্ষোভের মাঝেই সুনীল সর্দার নামে এক বিজেপি কর্মী আহত হন। দলের কর্মী, সমর্থকদের অভিযোগ, গ্রামবাসীরা যখন তিন জনের বাড়িতে টাকা চেয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন তখনই বাইরে থেকে তৃণমূলের লোকেরা এসে হামলা চালায়। প্রতিবাদে লাঠি, কাঠ, বাঁশ নিয়ে মারমুখী হতে দেখা যায় গ্রামের অনেক মহিলাকে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিমল সিংহরায় নামে দলের এক নেতাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। দুই আহতকেই হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
তৃণমূলের কালনা ১ ব্লক সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায়ের দাবি, ‘‘কাটমানি নিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আইন হাতে তুলে নিয়ে বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে ওই গ্রামে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদারের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অরাজনৈতিক ঘটনাতে রাজনীতি খুঁজছে তৃণমূল।’’
এ দিন গলসি ২ ব্লকের সাটিনন্দী পঞ্চায়েতও ঘেরাও করে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় আগে ঠাঁই পেয়েছে সম্পন্ন লোকেরা। অথচ অনেক দিনমজুর বা খেতমজুরের নাম রয়েছে পেছন সারিতে। সমস্ত জবকার্ডধারীরা একশো দিনে কাজ পাচ্ছে না কেন, সে প্রশ্নও ওঠে। সুপারভাইজারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বিজেপি নেত্রীআরতি বর্মণের দাবি, ‘‘প্রধানের কাছে আমাদের অভিযোগগুলির সদুত্তর চেয়েছি। না পেলে আগামী দিনে পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দেব।’’ প্রধান বৈশাখী পুঁইলে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে কারও নামে বা নির্দিষ্ট কোনও কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাইনি। স্মারকলিপির দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখা হবে।’’
বিজেপি কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নেওয়া, কাটমানি ফেরত-সহ পাঁচ দফা দাবিতে কেতুগ্রাম থানাও ঘেরাও করেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। পরে স্মারকলিপিও দেন। বিজেপি নেতা অনিল দত্তের অভিযোগ, ‘‘সিভিক ও ভিলেজ পুলিশরা বেশির ভাগ সময় শাসকদলের ক্যাডারের কাজ করেন। বিজেপি কর্মীরা মার খেলে কোনও অভিযোগ নিতে চায় না পুলিশ।’’ দাবিগুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কেতুগ্রাম থানার আইসি সুমন চট্টোপাধ্যায়।
ভাতারেও সরকারি প্রকল্পে ঘর তৈরির নাম করে তৃণমূলের নেতারা ‘কাটমানি’ নিয়েছেন বলে ১৯৮ জন উপভোক্তা পঞ্চায়েতে চিঠি করেছিলেন। মঙ্গলবার বিজেপি ওই টাকা ফেরত, একশো দিনের কাজ চালু ও গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাল ভাতারের বড়বেলুন ১ পঞ্চায়েতে। স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বিজেপির স্থানীয় নেতা আলি হোসেনের দাবি, “কাটমানি ফেরতের দাবিতে আমাদের সঙ্গে বড়বেলুন গ্রামের ৩ নম্বর সংসদের তৃণমূল সদস্য বাসুদেব দুলেও সামিল হয়েছিলেন।’’ যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই বলে দাবি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এ দিনই রায়না ১ বিডিও-র কাছে গোপালপুর গ্রামের ছোট্টু মারান্ডি নামে এক জন অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার নাম করে স্থানীয় এক জন আড়াই হাজার টাকা ‘কাটমানি’ নিয়েছেন তাঁর থেকে। বিজেপি নেতা অশোক সাঁতরার দাবি, “তিন জন বাসিন্দার কাছে ঘর তৈরির নাম করে, ঘর তৈরির টাকা আসার পরে ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে।’’ প্রশাসনের দাবি, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।