আবাস যোজনার ঘর। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের নামের তালিকা যাচাই করতে গিয়ে তৃণমূলের নেতাদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে, সমাজমাধ্যমে তাঁর নামে অসম্মানজনক পোস্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কাটোয়া ২ ব্লকের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও জনজাতি উন্নয়ন প্রকল্পের আধিকারিক কল্যাণী কিস্কু। শুক্রবার সংশ্লিষ্ট বিডিও’র কাছে লিখিত ভাবে অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা জেলা পরিষদের সদস্য নিতাইসুন্দর মুখ্যোপাধ্যায় ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাম্প অপারেটর কল্যাণ সরখেলের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের কাছেও। সেই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে যে পোস্ট করা হয়েছে তার ছবিও দিয়েছেন। যদিও অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন নিতাইসুন্দর মুখ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ও ব্লক প্রশাসন।
আবাস প্রকল্প নিয়ে গোড়া থেকেই জনপ্রতিনিধিদের দূরে রাখতে চেয়েছে তৃণমূল। বার বার প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও বিরোধীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যতই সামনে দূরে থাকার কথা বলুন নিয়ম শিথিল করার মধ্যে দিয়ে আসলে ‘পছন্দের’ উপভোক্তাদের বাড়ির টাকা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের অবশ্য দাবি, ‘‘এর আগেও আবাস যোজনা নিয়ে চাপ দেওয়ার একটা অভিযোগ হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সেটা জেলায় জানানো হয়। তখন সবাইকে সতর্ক করা হয়। আবারও বলছি, সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না জনপ্রতিনিধিরা। কেউ করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’
অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে ওই আধিকারিক পলাশি ও মাখালতোর গ্রামে আবাসের তালিকা সমীক্ষায় গিয়েছিলেন। পলাশি গ্রামেই জেলা পরিষদের সদস্য নিতাইয়ের বাড়ি। অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকার যোগ্যতা আছে কি না দেখতে রাজোয়ার পাড়ায় গিয়ে উপভোক্তাদের নানা প্রশ্ন করেন ওই আধিকারিক। ওই দিনই পিএইচই’র পাম্প অপারেটর কল্যাণ সরখেল সমাজমাধ্যমে ওই আধিকারিকের পদ জানিয়ে পোস্ট করেন, সমীক্ষা করতে গিয়ে কে, কোন চালের ভাত খায়, হাঁড়ি, কড়াই, কলসি, কাঁথা-কম্বলেরও তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে মানুষ ক্ষুব্ধ। ওই পোস্টেই নিতাইসুন্দর মন্তব্য করেন যে, বিসিডব্লু ইনস্পেক্টর গরিব মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করেছেন।
বিজেপির জেলা (কাটোয়া সাংগঠনিক) সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়, কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়েরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, “তৃণমূলের চোর, গুন্ডারাই জোর করে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। সরকারি কর্মীদের ভয় দেখিয়ে আবাসে দুর্নীতি করে টাকা চুরি করতে চাইছেন ওঁরা। ওই সরকারি আধিকারিক সাহস করে যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে লিখিত অভিযোগ করেছেন তা প্রশংসাযোগ্য।’’ কল্যাণী শুধু বলেন, “আমি যা অভিযোগ জানানোর তা লিখিত ভাবে বিডিও, মহকুমা ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
অগ্রদ্বীপের ওই তৃণমূল নেতা অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমি ওই সরকারি আধিকারিককে কোনও অসম্মান করিনি। কেন এমন অভিযোগ করলেন তা শুনে আমি হতবাক।’’ কল্যাণ সরখেলের দাবি, ‘‘ওই আধিকারিকের আচরণে গ্রামবাসী অসম্মানিত হয়েছেন। সেটারই প্রতিবাদ করেছি।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমি শুনিনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ কাটোয়া ২-এর বিডিও আসিফ আনসারি বলেন, “কল্যাণীদেবীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’