ভোটের মুখে দ্বন্দ্ব তৃণমূলে

রবিবার ইসিএলের কুনস্তোরিয়া এরিয়ার প্রগতি স্টেডিয়ামে তৃণমূল প্রভাবিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের (‌কেকেএসসি)-এর সপ্তম সম্মেলন হয়।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৭
Share:

জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও মন্ত্রী মলয় ঘটক।

পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজতেই প্রকাশ্যে এল আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও মন্ত্রী মলয় ঘটকের দ্বন্দ্ব।

Advertisement

রবিবার ইসিএলের কুনস্তোরিয়া এরিয়ার প্রগতি স্টেডিয়ামে তৃণমূল প্রভাবিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের (‌কেকেএসসি)-এর সপ্তম সম্মেলন হয়। সেখানে মলয়বাবু মলয়বাবু বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত কেউ কোলিয়ারির কর্মী হলে তাঁকে কেকেএসসি করতে হবে। অন্য কোনও শ্রমিক সংগঠন করা যাবে না। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন কেকেএসসি গঠন হয়েছে। ৩৫ হাজার সদস্য আছে। মনে রাখতে হবে, আজকের সম্মেলন শুধু শ্রমিক সংগঠনের সম্মেলন নয়। এটা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলীয় সম্মেলনও।’’

তবে দ্বন্দ্ব কোথায়?

Advertisement

জিতেন্দ্রবাবু ২০১৬ সালে পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রে বিধায়ক নির্বাচিত হন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তারপর থেকেই তাঁর সঙ্গে একে মলয় শিবিরভুক্ত কেকেএসসি’র সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এখানেই শেষ নয়। কেকেএসসি’র হাজার খানেক সদস্য হিন্দ মজদুর সভা (এইচএমএস)-য় যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে পাণ্ডবেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শিবনাথ ঘোষ, জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি উদিপ সিংহ ও অন্ডালের খাসকাজোড়ার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের সদস্য রেনুবালা নুনিয়ার স্বামী নিরালা নুনিয়া কেকেএসসি ছেড়ে এইচএমএস-এ যোগ দেন। তাঁরা প্রত্যেকেই মেয়রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। শুধু তাঁরা নন, এইচএমএস’র সাধারণ সম্পাদক শিবকান্ত পাণ্ডেও মেয়রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বছর খানেক আগে মেয়র ইসিএলের শোনপুরবাজারী প্রকল্পে একটি সভায় উপস্থিত ছিলেন। যেখানে তৃণমূল ও এইচএমএস’র পতাকা লাগানো ছিল।

এইচএমএস তৈরি করেছিল জনতা দল। তবে এখন এই সংগঠন কোনও দলের নিয়ন্ত্রণে নেই। তৃণমূল সূত্রে খবর, যেহেতু এই সংগঠন জনতা দল তৈরি করেছিল, তাই সেখানে কেউ যোগ দিলে তৃণমূলের একাংশ ভাল চোখে দেখেন না। এই নিয়ে বার বার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।

মলয় ঘনিষ্ঠ কেকেএসসি’র সাধারাণ সম্পাদক হরেরাম সিংহের সঙ্গে জিতেন অনুগামীদের দ্বন্দ্ব হয়েছে বার বার। অভিযোগ ওঠে, এক বছরের মধ্যে পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহিতে কেকেএসসি প্রভাবিত জাগোবাংলা কার্যালয় ভাঙচুর চালায় সিপিএম ছেড়ে আসা জিতেন ঘনিষ্ঠ ঝগড়ু সিংহ। এর পরে অন্ডালের খাসকাজোড়ায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি নিরালা নুনিয়ার নেতত্বে বেধড়ক মার খান কেকেএসসি’র নেতা প্রদীপ সিংহ। মাস আটেক আগে শোনপুরবাজারী সমবায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে এইচএমএস ও কেকেএসসি’র দ্বন্দ্বের জেরে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

এ দিকে, কেকেএসসি করার ফরমান প্রসঙ্গে শিবনাথ ঘোষ বলেন, “২০০৫ সালে বাঁকোলা এরিয়ায় প্রথমে কেকেএসসি’র পতাকা তুলেছি আমি। দল ক্ষমতায় আসার পরে হরেরাম সিংহ আমার মতো নেতাদের পাত্তা না দিয়ে সংগঠনে আগত নতুনদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। সম্মান না পেয়ে এইচএমএস’এ যোগ দিয়েছি। সম্মান পেলেই কেকেএসসিতে যোগ দেব।”

অন্য দিকে, দলের এক নেতা জানান, ২০১৫ সালে এইচএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক শিবকান্ত পাণ্ডেকে আসানসোলের সেনরেলে রোডে একটি হোটলে আয়োজিত সভায় মলয় ঘটক, মন্ত্রী তথা দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস, ভি শিবদাসনের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেন। পরে শিবকান্ত পাণ্ডে জিতেন্দ্র তিওয়ারি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠায় মলয়বাবুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। যদিও শিবকান্তবাবু বলেন, “আমি দলে যোগ দেওয়ার সময়ই দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছিলাম, এইচএমএস ছাড়ব না। এখন আমাদের সংগঠনে দলে দলে খনিকর্মীরা যোগ দিলে আমাদের কী করার আছে। আমরা স্বাগত জানাব।”

এ সব নিয়ে মেয়র বলেন, “দলের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। দলের নেতারা যা বলার বলবেন।’’

এই দ্বন্দ্বের আগে এসসি, এসটি, ওবিসি সম্মেলনে ভি শিবদাশন বলেছিলেন, ‘‘দু’বার মন্ত্রী হয়ে মলয়দা শুধু তাঁর নিজস্ব বিধানসভা আসানসোল উত্তরের জন্যই উন্নয়ন করেছেন। জামুড়িয়া, অন্ডাল, কুলটি, বারাবনি, রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, সালানপুরের জন্য কিছু করেননি। এমনকী চাকরিও হয়েছে আসানসোলের যুবকদেরই।’’

যদিও সোমবার ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘সম্প্রতি এসসি, এসটি, ওবিসি সম্মেলনে আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে মলয়দার সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মলয়দা আমাকে প্রথম ব্লক সভাপতি বানিয়েছিলেন। মলয়দা আমার বড়দা। কোনও ভুল বোঝাবুঝি থাকতেই পারে না।’’

তবে ভোটের মুখে ফের তৃণমূলে দ্বন্দ্বে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে শীর্ষ নেতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement