আশা-আশঙ্কায়: ঘটনাস্থলের কাছে অপেক্ষায় নিখোঁজ যুবকদের পরিজনেরা। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
‘অবৈধ’ কুয়ো খাদানে কয়লা কাটতে গিয়ে কুলটির আলডিহিতে নিখোঁজ আকনবাগানের তিন যুবকের হদিস মেলেনি বুধবারও। মঙ্গলবারের পরে এ দিনও উদ্ধারকাজ না হওয়ায় বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীর একাংশ। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীদের তাঁরা এলাকাছাড়া করেন বলে অভিযোগ। কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ফের উদ্ধারকাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভ থামে।
রবিবার ওই ঘটনার পরে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত চার দফায় উদ্ধারকাজ চালায় পুলিশ ও ইসিএলের উদ্ধারকারী দল। কিন্তু দলটির তরফে জানানো হয়, খাদানে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস রয়েছে। খাদানের মুখ বড় করে না কাটা হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অন্য যন্ত্র নিয়ে খাদানের ভিতরে যাওয়া সম্ভব নয়। মঙ্গলবার যন্ত্র আনিয়ে খাদান-মুখ কাটা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল পুলিশ।
কিন্তু সে দিনও সারা দিন এবং বুধবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে তোড়জোড় হয়নি, অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখান আকনবাগানের বাসিন্দারা। গ্রামের শতাধিক মহিলা-পুরুষ বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুর চিনাকুড়ির বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। উজ্জ্বলবাবু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়ে তখনকার মতো পরিস্থিতির সামাল দেন।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিধায়ক ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু সেখানেও আকনবাগানের বাসিন্দাদের অনেকে বিধায়ককে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান। এই পরিস্থিতিতে সেখানে দাঁড়িয়েই উজ্জ্বলবাবুকে ফোনে ইসিএল কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করার আর্জি জানাতে শোনা যায়। বিধায়ক এ দিন এলাকায় অবৈধ কয়লা খাদান রমরমিয়ে চলার অভিযোগ মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘গ্রামের তিন গরিব পরিবারের যুবক অবৈধ খাদানে কয়লা কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁদের সন্ধান চালানোর যাবতীয় চেষ্টা চলানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে।’’
এ দিন বিধায়ক দাবি করেন, ওই খাদান এলাকায় নিয়মিত কয়লা কাটেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ভূগর্ভে প্রায় ৪০ ফুট লম্বা একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে। বিধায়কের অনুমান, ‘‘মনে হচ্ছে ওই সুড়ঙ্গের কোথাও রয়েছেন তিন যুবক। এলাকায় যন্ত্র নামিয়ে মাটি কেটে উদ্ধারকাজ শুরু করার জন্য ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জিএমকে আর্জি জানিয়েছি।’’ সোদপুর এরিয়ার জিএম সৌমেন্দু কুণ্ডু বলেন, ‘‘বিধায়কের আর্জি খতিয়ে দেখতে আলোচনা চলছে। ওই জমিটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। তাই চাইলেই অন্য কারও জমিতে যন্ত্র নামিয়ে মাটি কাটা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’
খাদানে নিখোঁজ তিন জনকে খুঁজে বার করার দাবিতে এ দিনই জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন ‘পশ্চিম বর্ধমান জেলা আদিবাসী কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ ও ‘আদিবাসী স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইউথ ফোরাম’-এর সদস্যেরা। ওই কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভাপতি বাবুরাম টুডুর হুঁশিয়ারি, অবিলম্বে উদ্ধারকাজ শুরু না হলে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।