বাঁ দিক থেকে, পূজা ধীবর, সন্দীপ পাতর ও কেয়া ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ টিউশন করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছেন। আবার কারও বাবা দিনমজুরের কাজ করেও ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। কাঁকসার বিভিন্ন এলাকায় এমনই কয়েকজন পড়ুয়া প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সফল হয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিকে।
কাঁকসার আমলাজোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন কেয়া ঘোষ। মানিকাড়া গ্রামের এই মেয়ে কলা বিভাগে পড়াশোনা করে পেয়েছেন ৪৫৬। কেয়া জানান, বাবা মদন ঘোষ দিনমজুরের কাজ করেন। সংসারের অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। ছোট থেকে দারিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েছেন তিনি। পড়াশোনার খরচ চালাতে নিজে টিউশনও দিয়েছেন।
ভূগোল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ইচ্ছে রয়েছে কেয়ার। তিনি জানান, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নানা ভাবে তাঁকে সাহায্য করেছেন। কোনও অভাব বুঝতে দেননি। তবে ভবিষ্যতে পড়াশোনার খরচ কী করে জোগাড় হবে, সে নিয়েই এখন চিন্তায় কেয়া। তার বাবা মদনবাবু বলেন, ‘‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেব না।’’ স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি কুলদীপ সরকার বলেন, ‘‘আমরা ওই ছাত্রীর পাশে রয়েছি। তার ফল এলাকার বহু দুঃস্থ ছেলেমেয়ের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’’ প্রধান শিক্ষক সন্দীপ চক্রবর্তী জানান, কেয়া গোটা এলাকার গর্ব।
অজয় ও জঙ্গলে ঘেরা ছোট একটি গ্রাম বনকাটির বনগ্রাম। এই গ্রামের সন্দীপ পাতর এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪০৫ নম্বর পেয়েছেন। বাবা বনমালি পাতর একটি বেসরকারি চালকলে প্রহরীর কাজ করেন। সংসারে অনটন রয়েছে। প্রতিকূলতার মাঝেই পড়াশোনা চালাতে হয়েছে সন্দীপকে। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও খরচ জোগাড় করা দুষ্কর, জানান সন্দীপ। তাঁর কথায়, ‘‘জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভাল ফল হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে সুযোগ হবে না। এখন অঙ্কে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই।’’ সন্দীপ জানান, কাঁকসা উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছেন। খুব সাহায্য করেছেন শিক্ষক বন্ধন দাস। বাধা কাটিয়ে সন্দীপের এমন ফলে খুশি ছোট থেকে তাঁর দেখভাল করা রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও।
বুদবুদের কসবা রাধারানি বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী পূজা ধীবর এ বার কলা বিভাগ থেকে ৪০৫ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন। বাবা আনন্দ ধীবর চাষবাস করেন। নিজের সামান্য জমি রয়েছে। কিছু ভাগচাষ করেন তিনি। পূজাও টিউশন করে নিজের পড়াশোনা চালিয়েছেন। বাংলা অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চান তিনি। পূজা বলেন, ‘‘ছোট থেকে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। সংসারে কষ্ট থাকলেও বাবা তা আমাদের বুঝতে দেননি। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করার ইচ্ছে রয়েছে।’’ সংসারের হাল ফেরানোই লক্ষ্য, জানান তিনি। পূজার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ কোনার বলেন, ‘‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি ওই ছাত্রীর পাশে থাকার। অর্থের অভাবে যাতে তার পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’