এ দিনও পড়ুয়াদের বোঝাতে তাদের বাড়ি যান উদয়পল্লি শিক্ষা নিকেতনের শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ বিরতির পরে স্কুল খুললেও, পড়াশোনার অভ্যাস বা সুযোগ হারিযেছে অনেক পড়ুয়াই। মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু হওয়ার পরেও তাদের অনেকেই স্কুলে আসনি। পড়ুয়াদের ফেরাতে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ি-বাড়ি গিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা। সে ডাকে সাড়া দিয়েছেন অনেকে। আবার আউশগ্রামের দেখানো পথে হেঁটে জেলার অন্য স্কুলের শিক্ষকেরাও পৌঁছে গিয়েছেন পডুয়াদের বাড়ি।
টেস্টের প্রথম দিন আউশগ্রামের আদুরিয়া দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ জন পরীক্ষার্থী গরহাজির ছিল। বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে চার জন স্কুলে যায়। প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষের দাবি, ‘‘শিক্ষকদের, বন্ধুদের কথা শুনে চার জন ফিরেছে। বাকিদের স্কুলে ফেরানোরও চেষ্টা হচ্ছে।’’ গুসকরার সুশীলা যজ্ঞেশ্বর পাবলিক হাইস্কুলেও অনুপস্থিত ১২ জন পড়ুয়া এ দিন পরীক্ষা দিতে যায়। প্রধান শিক্ষক জয়দীপ দাস বলেন, ‘‘টেস্ট শুরুর পরে দেখেছিলাম, ১৫৬ জনের মধ্যে ৫৫ জন পড়ুয়া গরহাজির। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ওদের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা না দেওয়ার কারণ জানতে চান শিক্ষকেরা। স্কুলে আসার কথাও বলা হয়। বৃহস্পতিবার ১২ জন পড়ুয়া বিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষায় বসেছে।’’ এমনকি, যে সব ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তাদের অভিভাবকদের কাছেও শ্বশুরবাড়ি থেকে এনে পরীক্ষা দেওয়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে, জানান তিনি। কয়রাপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠেও গরহাজির থাকা ১৪ জন পরীক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সতীনাথ গোস্বামী।
বর্ধমান শহরের উদয়পল্লি শিক্ষানিকেতন হাইস্কুলে ১১২ জনের মধ্যে টেস্টে বসেছে ৯৩ জন। বাকিদের খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক গোপাল ঘোষালের নেতৃত্বে বাড়ি-বাড়ি যান শিক্ষক সুশান্ত রায়, মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ দে, রামেশ্বর মান্ডি, বাসু সমাদ্দারেরা। তাঁদের দাবি, কয়েকজন পড়ুয়া বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতির কারণে কাপড়ের দোকান, গ্রিলের দোকানে কাজ শুরু করেছে। তাদের পরিবারকে বোঝানো হয়েছে। গোপালবাবুর দাবি, মোট ১৯ জন ছাত্র অনুপস্থিত ছিল। এ দিন দশ জনকে স্কুলে ফেরানো হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় গলসির নানা এলাকায় পড়ুয়াদের ফেরাতে বাড়ি-বাড়ি যান বিডিও (গলসি ২) সঞ্জীব সেন। সঙ্গে ছিলেন স্কুল পরিদর্শক (গলসি চক্র) জয়ন্ত ঢালি, গলসি (পশ্চিম চক্র) দেবকুমার ভক্ত। বেলান বেল্লশ্বর হাইস্কুল ও আদড়াহাটি বিএস শিক্ষানিকেতনের বেশ কয়েকজন পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝান তাঁরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের প্রতিটি স্কুলে গরহাজির পড়ুয়াদের চিহ্নিত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পরে, যাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারাও। জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে গলসির দুই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিডিও ও গলসি চক্রের পরিদর্শক। তার পরেই একজন ছাত্রী স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। বেলান, আদড়াহাটির ওই পড়ুয়াদের দাবি, ‘‘বিভিন্ন কারণে স্কুলে যাচ্ছিলাম না। বিডিও এসেছিলেন। এ বার যাব।’’ বিডিও বলেন, ‘‘বেশির ভাগ পড়ুয়া স্কুলে যেতে রাজি হয়েছে। এক-দু’দিনের মধ্যে ওই পড়ুয়ারা স্কুলে না গেলে তাদের বাড়িতে ফের যাব।’’