বেরনোর পথে। —নিজস্ব চিত্র।
ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে বিধায়ক ও পর্যবেক্ষকের কাছে তোলাবাজির অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৃণমূলেরই সাতটি অঞ্চলের সভাপতিরা। সেই অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলেই রবিবার মঙ্গলকোটের সভা থেকে কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলকে পদ থেকে অপসারণ করার ঘোষণা করলেন অনুব্রত মণ্ডল। নতুন সভাপতি হলেন বিকাশ মজুমদার।
এ দিন মঙ্গলকোটের কাশেমনগরের সভার শুরুতেই তোলাবাজি দল বরদাস্ত করবে না বলে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের বার্তা দেন অনুব্রত। চেনা মেজাজেই প্রয়োজনে হাত-পা ভেঙে দেওয়া, লাইটপোস্টে মেরে হাঁটু ভেঙে দেওয়ার কথাও বলেন। তারপরেই দেবাশিসবাবুর অপসারণের কথা জানানো হয়। অনুব্রত বলেন, ‘‘দলকে ভাঙিয়ে তোলা আদায় চলবে না। চিটিংবাজদের দলে জায়গা নেই। দেবাশিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছিলাম। ওকে সরানো হল।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে মাস খানেক ধরেই ফেরিঘাটে তোলাবাজি, একশো দিনের কাজে রাস্তা তৈরি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানাচ্ছিলেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। বাসিন্দাদের সেই ক্ষোভের কথা আঁচ করেই কেতুগ্রামে দু’টি ব্লকের সাতটি অঞ্চল সভাপতি দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে বিধায়ক শেখ সাহনওয়াজ ও পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের কাছে তোলাবাজির অভিযোগ জানান। এ দিন সভা থেকেই অনুব্রত জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বোলুপরের কেতুগ্রামে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়, দেবাশিসবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
তৃণমূল একটি অংশের মতে, ‘সভাপতি বদলে’র মাধ্যমে আসলে কেতুগ্রামে দলের গোষ্ঠী কোন্দলে লাগাম টানারই চেষ্টা করছে দল। কী রকম? তৃণমূল কর্মীদের একাংশ জানান, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ওই ব্লকের সভাপতি ছিলেন বিকাশবাবু। ২০১২তে একটি বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তাঁকে সরিয়ে সভাপতি করা হয় দেবাশিসবাবুকে। সেই সময়ে দেবাশিসবাবু বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচত ছিলেন বলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দেবাশিসবাবু বিভিন্ন বিষয়ে বিধায়কের বিরোধিতা শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। এরপরেই গোষ্ঠী-কোন্দলে লাগাম টানতে ও এলাকায় দলের ‘ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন’ রাখতে দেবাশিসবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। যদিও এ দিন অপসারণের প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমাকে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।’’ বিকাশবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’’
এ দিন অনুব্রতের সভাপতি বদলের ঘোষণার পরে ফের দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে সরব হন বিধায়ক শেখ সাহনওয়াজ। তাঁর কথায়, ‘‘পর্যবেক্ষক যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই হবে। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসী ওনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করছিলেন।’’ এ দিনের সভায় ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের চার সিপিএম সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। গোতিষ্ঠা অঞ্চল সভাপতি করা হয় মনোরঞ্জন ঘোষকে।