—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জ্বালানি তেলের বরাদ্দ বাড়াতে হবে, এই দাবিতে দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডেন বটলিং প্লান্টে ৩৩ জন ট্রাকচালক ২০ দিন ধরে ধর্মঘট করছেন। এর জেরে দুর্গাপুজোর আগে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের আকাল দিতে পারে বলে আশঙ্কা ট্রাক মালিকদের।
দুর্গাপুরে লেনিন সরণির ধারে রয়েছে ওই বটলিং প্লান্ট। সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ ও হুগলি জেলায়। ট্রাক মালিকদের তরফে প্রজেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ট্রাক মালিক সংগঠন ও চালক প্রতিনিধিদের নিয়ে সিলিন্ডার পরিবহণের বিষয়ে ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ৫ বছরের জন্য ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ৩.৬৫ কিলোমিটারের জন্য ১ লিটার ডিজ়েল বরাদ্দ। সম্প্রতি ৩৩ জন ট্রাকচালক দাবি তোলেন, ৩.৫ কিলোমিটার পিছু ১ লিটার তেল বরাদ্দ করতে হবে। সেই দাবিতে তাঁরা গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রাক বন্ধ রেখেছেন। দুর্গাপুজোর পরে এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও, ওই ট্রাকচালকেরা তাঁদের দাবিতে অনড় রয়েছেন বলে দাবি ট্রাক মালিকদের। প্রজেশ বলেন, “আরও ২৫০টি গাড়ি চলছে। কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ৩৩ জন কিছুতেই গাড়ি বার করতে চাইছেন না। এর ফলে প্রতিদিন কিছু কিছু করে সিলিন্ডারের ঘাটতি পড়ছে। ফলে পুজোর মুখে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সিলিন্ডারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বুকিং করার অনেক পরে সিলিন্ডার পাবেন গ্রাহক। আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বকে বলেও ফল হচ্ছে না।”
ট্রাক মালিকদের দাবি, দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি পিছু গড়ে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টাকা করে তাঁদের ক্ষতি হচ্ছে। গাড়িতে থাকা সিলিন্ডার নামিয়েও দিচ্ছেন না চালকেরা। এই পরিস্থিতিতে গ্যাস সংস্থার তরফে গাড়ি পিছু আট লক্ষ টাকা করে কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।
ধর্মঘটে শামিল ট্রাক চালকদের তরফে সুমিত লায়েক দাবি করেন, কম তেলে গাড়ি চালাতে গিয়ে ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, “মাসে তিন-চার বার করে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তেল না বাড়ালে কী ভাবে গাড়ি চলবে? দাবি না মানা হলে ট্রাক চালানো সম্ভব নয়।”
দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন আইএনটিটিইউসি-র ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেছি। চুক্তি না মেনে যাঁরা ধর্মঘট করছেন, তাঁদের নিয়ে প্রশাসনিক স্তরেও বিষয়টি আলোচনা করেছি। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটবে।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “যাঁরা এ সব করছেন, তাঁদের পিছনে কারা রয়েছেন, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দলের কেউ হলেও ব্যবস্থা হবে।”
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন একটি জরুরি ক্ষেত্রে অচলাবস্থা চলছে ২০ দিন ধরে। তোলাবাজি, কাটমানি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে জেরবার দুর্গাপুরের আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব। শ্রমিকদের স্বার্থে তাঁরা কাজ করেন না। মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুরে এসে অনীহা প্রকাশ করেছেন তাঁদের সম্পর্কে।” যদিও বিজেপি নেতার মন্তব্যে গুরুত্ব দেননি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।