ফাইল চিত্র।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার ক্ষতির মুখে পড়ছে ফসল। ফলে, বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এই ক্ষতি থেকে কিছুটা সুরাহা দিতে পারে ফসলবিমা। কিন্তু জেলার অনেক চাষি এখনও তার অন্তর্ভুক্ত হননি। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের দাবি, পূর্ব বর্ধমানে খরিফ মরসুমে বিপুল সংখ্যক চাষিকে বিমার আওতায় আনার জন্য জোরকদমে প্রচার শুরু হয়েছে। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত চাষিদের থেকে বাংলা শস্যবিমার আবেদনপত্র নেওয়া হবে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর চারেকে রাজ্যে সব চেয়ে বেশি চাষি ফসলবিমার আওতায় এসেছেন এই জেলায়। গত বছর জেলার প্রায় ৫ লক্ষ ৫২ হাজার চাষিকে বিমার আওতায় আনা গিয়েছিল। এ বার সে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বিমা সংস্থার তরফে শিবির করে আবেদনপত্র নেওয়া হচ্ছে। আবার, বুথে-বুথে গিয়েও বিমা সংস্থার প্রতিনিধিরা চাষিদের কাছে আবেদন সংগ্রহ করছেন। প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকাতেই এখন চলছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। কৃষি-কর্তারা জানান, কৃষকবন্ধু প্রকল্প-সহ নানা সুবিধা নিতে সেগুলিতে আসছেন হাজার-হাজার মানুষ। সেখানেও ফসলবিমা নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনও পঞ্চায়েত এলাকার ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণ জমি ক্ষতির মুখে পড়লে, সেখানকার চাষিরা ক্ষতিপূরণ পান। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে জেলার চাষিরা বিভিন্ন ফসলে ক্ষতির জন্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কৃষি-কর্তারা জানান, ফসলবিমার আবেদনপত্রে চাষিদের জমির পরিমাণ, কী ফসল চাষ করা হয়েছে, এ ধরনের বেশ কিছু তথ্য জানাতে হয়। বিমা সংস্থার প্রতিনিধিরা আবেদনপত্র সংগ্রহ করলেও কৃষি দফতর তা পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করে।
সোমবার জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, আউশগ্রাম, গলসি, রায়না, কালনা, বর্ধমান, পূর্বস্থলী, কেতুগ্রাম, মন্তেশ্বর, ভাতার, জামালপুরের মতো নানা এলাকা থেকে ফসলবিমার জন্য প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। ২৩টি ব্লক মিলিয়ে এ দিন পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে গিয়েছে। এই দু’লক্ষ চাষি প্রায় ৫০,৫০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন।
ফসলবিমার নোডাল অফিসার তথা জেলার সহ-কৃষি আধিকারিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার চাষিদের বিমার কিস্তি দিয়ে দেয়। ফসলবিমা চাষিদের রক্ষাকবচের মতো। জেলার প্রচুর চাষিকে বিমার আওতায় আনার জন্য আমরা এবং বিমা সংস্থার লোকজন জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছি। আমাদের আশা, ৩১ অগস্টের মধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারব।’’ জেলার এক কৃষি-কর্তার দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে না পারলে আরও কয়েকদিন ধরে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হতে পারে। তবে কৃষি-কর্তাদের অনেকের দাবি, উঁচু এলাকায় জমি রয়েছে, এমন চাষিদের একাংশ বিমার ব্যাপারে এখনও উদাসীন। যে ভাবে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্টের ঘটনা বাড়ছে, তাতে বিমার বিকল্প নেই—তাঁদের তা বোঝানোর চেষ্টা চলছে।