—প্রতীকী চিত্র।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যে সব পুরসভা এবং পঞ্চায়েত এলাকায় লোকসভা ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, এই বার্তার পরে দুর্গাপুর শহরে দলের পদাধিকারীদের একাংশের পদ থাকবে কি না, সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
অভিষেক রবিবার ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে জানান, লোকসভা ভোটে দল যেখানে পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে পুরসভার চেয়ারম্যান, দলের শহর সভাপতি, অঞ্চল সভাপতিদের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্গাপুর শহরে লোকসভা ভোটে দল আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বলে দাবি জেলা নেতৃত্বের। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দুর্গাপুর থেকে প্রায় ৭৬ হাজার ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। সে বার জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী। এ বার তৃণমূল আসনটি ফের দখল করলেও, দুর্গাপুর শহরে ফল ভাল নয় বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ।
এ বার লোকসভা ভোটে দুর্গাপুর পুর এলাকায় বিজেপি পেয়েছে ৪৫.২৩ শতাংশ ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৪১.৪৫ শতাংশ। শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে আছে মাত্র দশটিতে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। নবান্নে পুরসভাগুলিকে নিয়ে বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের হালও খুব খারাপ। ওয়ার্ডগুলোয় কাজ হচ্ছে না।’’ শহরে প্রায় দু’বছর নির্বাচিত পুরবোর্ড নেই। ৪৩ ওয়ার্ডের পুরসভা চালাচ্ছে ৫ জনের প্রশাসকমণ্ডলীর বোর্ড।
দলের একটি সূত্রের দাবি, প্রাক্তন পুর প্রতিনিধিদের অনেকের আচরণে হতাশ উচ্চ নেতৃত্ব। দলের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস লোকসভা ভোটের আগে-পরে শহরে বৈঠক করে তাঁদের জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেন। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও নানা অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। আইএনটিটিইউসি থেকে দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক জনকে বহিষ্কারের পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ। দলের এক ব্লক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে মানবিক প্রকল্পগুলি চালু করেছেন, দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা মনে করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই সে কাজ ঠিক মতো করেননি। অনেকের ভাবমূর্তির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।”
এই পরিস্থিতিতে সংগঠনে কিছু পরিবর্তন জরুরি বলে দাবি তাঁর। শহরের আগের বোর্ডের প্রাক্তন এক পুর প্রতিনিধি বলেন, “শেষ পুরবোর্ডের প্রতিনিধিদের কেউ ডিএসপি টাউনশিপে কোয়ার্টার্স দখল করে, কেউ বোল্ডারের বেআইনি ব্যবসা করে, কেউ বকলমে প্রোমোটারি করে নিজেদের পকেট ভরানোয় ব্যস্ত। দলের কাজ নিয়ে তাঁদের তেমন উৎসাহ নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরিস্থিতি বদলের কথাই বলেছেন।”
দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘কাকে সরিয়ে কাকে রাখবে তৃণমূল? সবার তো একটাই লক্ষ্য, কী করে পকেট ভরবেন। মানুষ ওদের কাউকে বিশ্বাস করেন না।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘নেতা বদলালে কি দুর্নীতি কমবে? কোনও লাভ হবে না। কারণ দলটা আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত।’’
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল সব খবর রাখে। কে পদে বসে দলের কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ পূরণ করছেন, সব খবর রয়েছে। সংগঠন মজবুত করার জন্য যা করার, নেতৃত্ব তা করবেন।’’