কার্জন গেট রং করার কাজ শুরু হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
শহরের গর্ব কার্জন গেট বারবার অবহেলার মুখে পড়েছে, অনেক বারই এমন ক্ষোভ জানিয়েছেন পুরাতত্ত্ব চর্চায় আগ্রহী ও ইতিহাস সন্ধিৎসুরা। ‘হেরিটেজ’ স্থাপত্য হিসেবে কার্জন গেটের সৌন্দর্যায়ন রক্ষা করতে গিয়ে সেখানকার কিছু হকারের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পুরসভারও। পুর-কর্তাদের দাবি, সে কারণে দু’সপ্তাহেও ৬৫ ফুট উচ্চতার কার্জন গেটে খিলানের নীচের দিকে রঙের পোঁচ পড়েনি। শহরের ইতিহাস সন্ধিৎসুদের দাবি, গেটের গায়ে গড়ে ওঠা গুমটি-দোকানের ফলে স্থাপত্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কার্জন গেটের দু’পাশে খিলানের গায়ে পেরেক পুঁতে দোকান করেছেন অনেকে। এ ছাড়া, বিসি রোড যাওয়ার ডান দিকে দু’টি স্থায়ী গুমটিও তৈরি হয়েছে। পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কার্জন গেট চত্বরে হকার বসতে দেওয়া হবে না। কয়েক দিন আগে ওই সব ব্যবসায়ীদের কার্জন গেট এলাকা ছাড়তে বলা হয়। অভিযোগ, তাতে তাঁরা কান না দেওয়ায় খিলানের এক দিকে রং করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ঠিকাদার। বৃহস্পতিবার পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রণব চট্টোপাধ্যায় গিয়ে হকারদের শহরের ঐতিহ্যরক্ষায় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেউ-কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে তৃণমূলের হকার ইউনিয়নের নাম করে শহরের ঐতিহ্যরক্ষায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন আমরা হকার ভাইদের কাছে মিনতি করছি। তাতে কাজ না হলে পুলিশকে জানাতে বাধ্য হব।’’
নাট্যকার তথা সাহিত্যিক দেবেশ ঠাকুরের মতে, ‘‘এই গেটের সৌন্দর্যায়নে সকলের সহযোগিতা করা উচিত। প্রয়োজনে ওই অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের পুরসভা পুনর্বাসন দিতে পারে।’’ আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, “শহরের প্রাচীন স্থাপত্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার, সেটা বুঝতেই হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার লক্ষ টাকা খরচে রঙের কাজ হচ্ছে। স্থায়ী আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, কার্জন গেট ঘিরে ‘সেলফি জ়োন’ করা হবে। পুজোর আগে রঙের কাজ শেষ করতে চেয়েছিল পুরসভা। পুর-কর্তা প্রণবের ক্ষোভ, “কার্জন গেটে ব্যবসা করার জেরে সৌন্দর্যায়ন আটকে যাবে, তা মানা যায় না!’’
ওই চত্বরে ব্যবসা করা হকারদের অনেকের যদিও দাবি, পুরোটাই তৃণমূলের ইউনিয়ন দেখছে। তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র, কার্জন গেট চত্বর ইউনিয়নের নেতা প্রসেনজিৎ দাস পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রসেনজিতের দাবি, ‘‘সকালে জানিয়ে বিকেলে উচ্ছেদ, এটা তো হয় না। পুজোর তিন-চার দিন আগে এ রকম সিদ্ধান্ত বদলের অনুরোধ করেছি। পুজো মিটলে আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হবে।’’