সেই জুতো। নিজস্ব চিত্র
মহিলাদের সুরক্ষায় ‘স্মার্ট জুতো’ তৈরির দাবি করেছেন হুগলির ব্যান্ডেলের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশনের চতুর্থ বর্ষের দুই বি-টেক পড়ুয়া। সম্প্রতি ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’ আয়োজিত ‘আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু স্মারক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় আন্তঃকলেজ মডেল প্রতিযোগিতায় স্মার্ট জুতোর মডেল দেখিয়ে রাজ্যের সেরা হয়েছেন সৈয়দ মোশারফ হোসেন ও স্বস্তিকা পাল। মোশারফের দাবি, তাঁর এই কাজ ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাডভান্সেস ইন কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যান্ডেলের ওই কলেজের ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশনের বিভাগীয় প্রধান রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী বলেন, “মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওঁরা অনেকদিন ধরে এই কাজ করছেন। এখন ওঁরা বিষয়টিতে অনেকখানি উৎকর্ষতা বাড়িয়েছেন। ওঁদের সাফল্যে আমরা গর্বিত।’’
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের টিলাবুনি গ্রামের মোশারফ বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরায় থাকেন। মোশারফ বলেন, “দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করলে মহিলারা জুতোর ‘প্যানিক বাটন’-এ চাপ দিলেই তাঁর অবস্থানের উল্লেখ করে মেসেজ পাঁচটি ফোন নম্বরে নিমেষে চলে যাবে।’’ কী ভাবে তা হবে?
মোশারফ জানান, জুতোর তলার অংশে বসানো থাকছে ব্যাটারি-সহ ‘জিএসএম’ (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন), ‘জিপিএস’ (গ্লোবাল পোজ়িশনিং সিস্টেম), ‘আরডুইনো মাইক্রো কন্ট্রোলার বোর্ড’ প্রভৃতি। স্থানীয় থানা-সহ পাঁচটি মোবাইল নম্বর এখানে যুক্ত করা যাবে। বিপদে পড়লে জুতোর সামনের দিকের ছোট্ট ‘প্যানিক বাটন’-এ চাপ দিলেই জিপিএস ঘটনাস্থলের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ চিহ্নিত করবে। ‘জিএসএম’ তা ওই পাঁচটি নম্বরে এসএমএস হিসেবে পাঠিয়ে দেবে। একটি নম্বরে ফোনও চলে যাবে। মোশারফের দাবি, আক্রমণকারীকে জুতো দিয়ে আঘাত করলে, সে অল্প মাত্রার বিদ্যুতের ঝটকা খাবে। জুতোর মধ্যে ৮০-১১০ গ্রাম ওজনের ‘ডিভাইস’ বসানো থাকবে। ফলে জুতোর ওজন বিশেষ বাড়বে না। যে কোনও রকমের জুতোয় ওই ‘ডিভাইস’ ব্যবহার করা যাবে। বাজারে বিক্রি করার সময় ‘ডিভাইসের’ দাম পড়বে আনুমানিক ৪০০-৪৫০ টাকা। জুতোর দাম আলাদা। জুতো যখন বাজারে আসবে, তখন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে উপভোক্তা নিজের পছন্দ মতো ফোন নম্বর দিতে পারবেন। পরে পরিবর্তনও করতে পারবেন।
কালনার বৈঁচির বাসিন্দা স্বস্তিকা বলেন, ‘‘পুরো পরিকল্পনা মোশারফের। সেটিকে আরও দ্রুত ও সক্রিয় করতে আমি সাহায্য করেছি।’’
কিন্তু জল-কাদার রাস্তায় এমন জুতো কত দিন টিকবে? মানুষের ওজন জুতোর তলার সূক্ষ্ম ‘চিপ’ কতটা সইতে পারবে? মোশারফের দাবি, ‘‘জুতোর ভিতরে সার্কিট এমন ভাবে রাখা থাকবে, যাতে মানুষের ভারে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আগামী দিনে পুরো জুতো বা ওই সার্কিট ‘ওয়াটার প্রুফ’ করা হবে। ফলে, বৃষ্টিতে বা জমা জলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এবং ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (মাইক্রোওয়েভ) কো-অর্ডিনেটর সৌরাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের আবিষ্কার যত হবে, তত তা মানুষের কল্যাণে লাগবে। ওঁদের আরও এগিয়ে যেতে বলব।”