ফাইল চিত্র।
ঘটনার ১০৬ দিনের মাথায় কয়লা কারবারি রাজেশ ঝা ওরফে রাজুকে খুনের মামলায় আদালতে চার্জশিট পেশ করল সিট। ঘটনায় ধৃত অভিজিৎ মণ্ডল, ইন্দ্রজিৎ গিরি, লালবাবু কুমার, মুকেশ কুমার ও পবনকুমার ওরফে ভকতের বিরুদ্ধে পরিকল্পনামাফিক খুন, খুনের চেষ্টা, মারাত্মক ভাবে জখম করা ও অস্ত্র আইনে শনিবার চার্জশিট পেশ করেছেন সিটের তদন্তকারী অফিসার। তবে, পরবর্তী কালে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশের কথাও আদালতে জানিয়েছে সিট। অভিযোগ, প্রমাণে কেসের তদন্তকারী অফিসার-সহ ৮০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তদন্ত যে মূলত প্রযুক্তি উপর নির্ভরশীল তা চার্জশিট থেকে পরিষ্কার। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সরঞ্জাম ও মোবাইল টাওয়ার লোকেশনের উপর ভিত্তি করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছে সিট। ঘটনাস্থলে মুকেশ ও পবনের উপস্থিতির কথা পুলিসি তদন্তে উঠে এসেছে। গরু পাচারে অভিযুক্ত আব্দুল লতিফের গাড়ির চালক শেখ নূর হোসেন ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। রাজুর সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন ব্রতীন মুখোপাধ্যায়। তিনি গুলিতে জখম হন। বর্ধমান সংশোধনাগারে টিআই প্যারেডে মুকেশ ও পবনকে শনাক্ত করেন ব্রতীন ও নূর। স্বাভাবিকভাবেই রাজুকে খুনের সময় মুকেশ ও পবন যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তা দুই প্রত্যক্ষদর্শীর শনাক্তকরণ থেকে পরিষ্কার। চার্জশিট সিজেএম চন্দা হাসমত গ্রহণ করেছেন।
চার্জশিটে সিটের তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, ১ এপ্রিল দুর্গাপুর থেকে একটি ফরচুনা গাড়িতে রাজু, ব্রতীন, আব্দুল লতিফ কলকাতা যাচ্ছিলেন। নূর গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার থেকে গাড়িতে ওঠেন রাজু। শক্তিগড়ে ল্যাংচা হাবের কাছে তাঁদের গাড়িটি দাঁড়ায়। গাড়িটিকে পিছন থেকে অনুসরণ করছিল একটি নীল রঙের বালেনো গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে লতিফ, ব্রতীন ও নূর কিছু কিনতে যান। রাজু একাই গাড়িতে ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ব্রতীন গাড়ির কাছে আসেন। সেই সময় বালেনো গাড়িতে আসা তিন দুষ্কৃতী রাজুর গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। দুষ্কৃতীরা গাড়ি থেকে নেমে রাজুকে গুলি করে। রাজুকে বাঁচাতে গিয়ে ব্রতীনের বাঁ হাতে গুলি লাগে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত অপারেশন সেরে চম্পট দেয়। বালেনো গাড়িটি শক্তিগড় থানার কাছে রেখে অন্য একটি গাড়িতে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। দু’টি গাড়ি দিল্লি থেকে চুরি করে আনা হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ দুর্গাপুর থেকে অভিজিৎকে গ্রেফতার করে। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে তাঁর বাড়ি। তিনি পেশায় গাড়ি চালক। বর্তমানে তিনি পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় থাকে। এর পর ইন্দ্রজিৎ গিরি ও লালবাবু কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বিহারের বৈশালী থেকে মুকেশ ও পবনকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পরিষ্কার, সিটি সেন্টার থেকে রাজুর গাড়িকে খুনিদের গাড়িটি অনুসরণ করে। সামান্য দূরত্ব বজায় রেখে তারা রাজুর গাড়িটিকে অনুসরণ করেছিল। অপারেশন সেরে কাটোয়ায় জাজিগ্রাম হয়ে দুষ্কৃতীরা পালায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও অভিজিতের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকে সেই তথ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে চার্জশিটে দাবি করেছে সিট। অভিযুক্তদের আইনজীবী মোল্লা মহতাবউদ্দিন বলেন, চার্জশিটের কপি এখনও হাতে পাইনি। কে খুন করল বা তৃতীয়জনের বিষয়ে চার্জশিটে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। চার্জশিট খুঁটিয়ে দেখার পরই তদন্তের বিষয়ে পুরোপুরি জানতে পারব।