অবস্থান-বিক্ষোভ। Stock Photographer
নতুন হাজিরা পদ্ধতি চালু করতে কর্তৃপক্ষ বিপুল টাকা খরচ করছেন। অথচ, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা হচ্ছে না। এই অভিযোগ তুলে বুধবার সাতটি শ্রমিক সংগঠন যৌথ ভাবে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করে। পরে তারা দাবিপত্র জমা দেয় ইডি (পিঅ্যান্ডএ)-র কাছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলি সূত্রে জানা যায়, ১৭ অক্টোবর দিল্লিতে সেলের বোনাস সংক্রান্ত বৈঠক হয়। এ বার সংগঠনগুলির তরফে ৪০,৫০০ টাকা বোনাস দাবি করা হয়েছিল। সিটু, আইএনটিইউসি, বিএমএস, আইএনটিটিইউসি, এআইটিইউসি, এআইইউটিইউসি এবং এইচএমএস এই দাবি করেছিল। এ ছাড়া, বকেয়া বেতন চুক্তির পুনর্নবীকরণ, ৩৯ মাসের এরিয়ার দেওয়া, অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন চুক্তি চূড়ান্ত করা, কারখানার সব বিভাগে একশো শতাংশ উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতি ও উৎসাহ ভাতা নীতির পুনর্মূল্যায়ন, শূন্যপদে নিয়োগ, ‘আরএফআইডি’ হাজিরা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়।
এ দিন কর্মসূচিতে ছিলেন সিটুর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএনটিইউসি নেতা রজত দীক্ষিত, বিএমএস নেতা অরূপ পায়, আইএনটিটিইউসি নেতা স্নেহাশিস ঘোষ, এইচএমএস নেতা সুকান্ত রক্ষিত প্রমুখ। তাঁদের দাবি, বোনাসের পরিমাণ নিয়ে বৈঠকে কোনও ঐকমত্য হয়নি। কর্তৃপক্ষ ২৩ হাজার টাকা দিতে সম্মত হয়েছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি তা মানেনি। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও কর্মীদের না জানিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্টে বোনাস বাবদ ২৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বরূপের দাবি, “কর্তৃপক্ষ এ ভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে, বিভিন্ন অধিকার ও সুবিধা থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করতে চাইছেন।” তিনি জানান, অবিলম্বে শ্রমিকদের দাবি মতো বোনাস ও কেন্দ্রীয় বেতন চুক্তি চূড়ান্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।
সংগঠনগুলির দাবি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা থাকে না। তাই আরএফআইডি হাজিরা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হচ্ছে গোড়া থেকে। নেতৃত্বের দাবি, ১৫ সেপ্টেম্বর বৈঠকে নতুন হাজিরা পদ্ধতি চালু না করে, সহমতের ভিত্তিতে এগোনোর আশ্বাস দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। আইএনটিইউসি নেতা রজত দীক্ষিতের অভিযোগ, “কিন্তু কর্তৃপক্ষ একতরফা ভাবে ২১ সেপ্টেম্বর ‘ফেস রিকগনিশন’ এবং আরএফআইডি হাজিরা পদ্ধতি চালুর নির্দেশিকা জারি করেন। এ ভাবে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কাছ থেকে জোর করে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করছেন। অগণতান্ত্রিক ভাবে সারাক্ষণ কর্মীদের উপরে নজরদারি চালাতে চাইছেন। তা ছাড়া, বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে যে ভাবে দুষ্কৃতীরা ব্যবহার করছে, সেই ভয়ও আছে।” বিএমএস নেতা অরূপ রায়ের দাবি, “নতুন হাজিরা পদ্ধতি চালু করতে বিপুল অর্থ খরচ করছেন কর্তৃপক্ষ। অথচ, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সব থেকে বেশি উৎপাদন হয়েছে কারখানায়।” তিনি জানান, ২০০৭ সাল থেকে উৎসাহ ভাতা পদ্ধতির পূনর্মূল্যায়ন করা হয়নি। কারখানার সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করতে অবিলম্বে দৈনিক উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ ভাতা চালু করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। কিন্তু তা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় বলেন, “শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবির বিষয়ে ডিএসপি কর্তৃপক্ষের তরফে তেমন করণীয় কিছু নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” এ দিন শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে ডিএসপি এবং এএসপির আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের দাবিও জানানো হয়। ডিএসপি সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে দুই ভাগে এই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি ও দ্বিতীয় ভাগে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হবে।