Asansol

স্পেশাল এডুকেটর কোথায়, প্রশ্ন স্কুলের

এমন এক-দু’টি ঘটনা নয়। জেলায় বিভিন্ন স্কুলে অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে লেখাপড়া করে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়ারা। কিন্তু এই ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন এমন নানা সমস্যার মুখে পড়ে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ০৯:৫৭
Share:

বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের প্রয়োজন বিশেষ শিক্ষক। প্রতীকী চিত্র।

বারাবনি পুঁচরা ভগবান মহাবীর জৈন সরাক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র ক্লাস চলাকালীন ইশারায় শিক্ষকের কাছে জল খেতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশেষ ভাবে সক্ষম ছাত্রটির ইশারা বুঝতে পারেননি শিক্ষক। ছাত্রটি সোজা প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায়ের কাছে গেলে শেষমেশ তাকে জল দেওয়া হয়।

Advertisement

দৃশ্য দুই: শৌচাগারের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সহপাঠীদের কাছে আবেদন জানায় আসানসোলের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। কিন্তু বিশেষ ভাবে সক্ষম ছাত্রীটির ভাষা বান্ধবীরা বুঝতে পারেনি। শেষমেশ ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রীটিকে শৌচাগার পর্যন্তপৌঁছে দেন।

— এমন এক-দু’টি ঘটনা নয়। জেলায় বিভিন্ন স্কুলে অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে লেখাপড়া করে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়ারা। কিন্তু এই ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন এমন নানা সমস্যার মুখে পড়ে। এর প্রভাব পড়ছে পড়াশোনাতেও। এইপরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, যে সব স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়ারা আছে, সেখানে এক জন করে ‘স্পেশাল এডুকেটর’ থাকার কথা। এঁদের দায়িত্ব: নিয়মিত বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। তাদের কী ধরনের সমস্যা আছে, তা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা। তাদের ইশারা বা ভাষা বোঝার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও সহপাঠীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কিন্তু স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কখনই দেখা মেলেনিস্পেশাল এডুকেটরের।

Advertisement

বারাবনির স্কুলটির প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম ছ’জন পড়ুয়া আছে। কিন্তু অভিজিৎ, পাপড়ি এবং হিরাপুর মানিকচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্যেরা প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন,স্কুলে কোনও দিনই স্পেশাল এডুকেটরের দেখা মেলেনি। তবে জেলা শিক্ষা দফতর থেকে ফোন করে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের সমস্যা বা অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবরকরা হয়।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে পশ্চিম বর্ধমানের স্কুলগুলিতে বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের দেখভাল ঠিক মতো হচ্ছে কি না। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস অরুণ প্রসাদের আশ্বাস, “প্রশাসন বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বেশ কিছু পদক্ষেপও করা হচ্ছে।”

জেলার গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিক তথা এগ্‌জ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তমোজিৎ চক্রবর্তী জানান, জেলায় ২০ জন স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম ৩৬৪ জন পড়ুয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক বা একাধিক স্কুলের জন্য প্রয়োজনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্পেশাল এডুকেটরকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা পর্যায়ক্রমে স্কুলগুলিতে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর দেখভাল করবেন। জেলায় মোট ১০৯টি সাধারণ রিসোর্স সেন্টার করা হচ্ছে। সেখানে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তমোজিৎ বলেন, “এই পদক্ষেপ করেই থেমে থাকা হবে না। তৈরি হয়েছে নজরদারি কমিটি, যারা স্পেশাল এডুকেটরদের গতিবিধি-সহ পুরো বিষয়টি দেখবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পাল জানান, জেলায় চিহ্নিত হওয়া বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বারাবনিতে একটি বিশেষ শিবির করে প্রায় ২০ জন এমন পড়ুয়াকে সহায়ক সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। এর সঙ্গে যে সব স্কুলে এ ধরনের ছাত্রছাত্রী আছে, তাদের জন্য বিশেষ পরিকাঠামোতৈরি করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement