কার্যালয় খোলার পরে একসঙ্গে দু’দলের নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
ফের তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে সিপিএমের বন্ধ পার্টি অফিস খুলল বর্ধমানে।
আগেরটা হয়েছিল মাস দুয়েক আগে কালনায়। সে বার ভাঙা পার্টি অফিস নতুন ভাবে গড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। এ বার মঙ্গলকোটের নিগনেও তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে সিপিএমের বন্ধ দলীয় কার্যালয় খোলা হল সোমবার।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মদন ঘোষ সব শুনে বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের গণতন্ত্র। যা ওরা চাইবে তাই হবে।’’ আর মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্রের সুফল পৌছাছে। তারই নিদর্শন দেখা গেল নিগনে।”
ভোটের ফল বেরনোর পরে শান্তি বজায় রাখার নানা চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। হাওড়ার আমতার কুমারিয়া গ্রামে হিংসা এড়াতে তৃণমূল ও বিরোধী দলের নেতারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামে গোলমাল চলবে না। বীরভূমের ইলামবাজারে তৃণমূল লিফলেট বিলি করে দলের কর্মীদের সংযত থাকার বার্তা দেয়। কালনায় তো ভাঙচুর হওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া সিঙ্গেরকোনের সিপিএম কার্যালয় নতুন করে গড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়। সিপিএম নেতারাও চমকে যান প্রস্তাব শুনে। পরে দফতরটি সারিয়ে খোলা হয়। তবে পরিস্থিতি যে বদলে গিয়েছিল তা নয়।
বর্ধমানে শাখা, সংগঠন মিলিয়ে এখনও ৯২টি কার্যালয় বন্ধ রয়েছে সিপিএমের। যার অনেকগুলিই কেতুগ্রাম, রায়না, পাণ্ডবেশ্বর এলাকায়। বর্ধমান শহর লাগোয়া এলাকাতেও বেশ কিছু কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। যদিও সিপিএম নেতাদের দাবি, ধীরে ধীরে সব অফিসই খোলা হবে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দার রেজ্জাক মণ্ডল বলেন, ‘‘১২৮টি দফতর বন্ধ ছিল। অনেকগুলিই খোলা হয়েছে। আরও হবে।’’
বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের পাশেই রয়েছে সিপিএমের মঙ্গলকোট দক্ষিণ-পূর্ব লোকাল কমিটির কার্যালয়টি। বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাঙচুর করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখানে। কর্মী-সমর্থকদের মারধর করারও অভিযোগ ওঠে। এ দিকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কার্যালয় বন্ধ থাকায় দলের নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা। জেলা নেতাদের কাছে একাধিকবার আর্জিও পাঠানো হয়। ওই সব কর্মী-সমর্থকদের কথায়, ‘‘নিগন বাসস্টপ গঞ্জ এলাকা। আশপাশের ২০-২৫টি গ্রামের মানুষ এর উপর নির্ভর করেন। ফলে সেখানে দফতর খোলা থাকলে অনেকটাই সুবিধে হয়।’’ এই দাবি মেনেই সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য দুর্যোধন সর-সহ কিছু নেতা তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অপূর্ববাবুর দাবি, ‘‘আবেদন পাওয়ার পরেই সিপিএম যাতে ওই দফতর খুলতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হই। ওই এলাকার দলের নেতাকেও সাহায্য করতে বলি।’’ এ দিন দুপুরে দফতরটি খোলার সময় সিপিএম নেতাদের পাশে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে নিগনের তৃণমূল নেতা ডালিম শেখকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক অবশ্য বলেন, “তৃণমূলের এক দল চায়নি আমাদের দলীয় দফতর খুলুক। তাদের ঠেকিয়ে তৃণমূলেরই আরেক দলের চেষ্টায় দলীয় দফতরটি খোলা গিয়েছে।” স্থানীয় নেতা দুর্যোধনবাবুর কথায়, “লোকাল কমিটির দফতরটি খোলার সময় তৃণমূল আমাদের পাশে ছিল।’’