Poor condition of road

Roads: রাস্তা যেন বিভীষিকা! বলছেন শহরবাসী

মোটরবাইকে করে খোসবাগানে যাচ্ছিলেন নির্মল সাহানা। রাস্তা কাটা রয়েছে বুঝতে পারেননি। গর্তে চাকা ঢুকে উল্টে যায় মোটরবাইকটি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২২ ০৭:৪৪
Share:

নিজস্ব চিত্র।

ঘটনা ১: বর্ধমান শহরের বংপুর মোড়। রাস্তা গর্ত করে পানীয় জলের পাইপ বসিয়ে ইটের গুঁড়ো দিয়ে বোজানো হয়েছে। বৃষ্টি পড়তেই জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে সেখানে। রাস্তা পেরোতে গিয়ে যাত্রী-সহ চাকা বসে বিপাকে পড়ে টোটো। তুলতে গিয়ে রাতের অন্ধকারে উল্টেও গেল সেটি।

Advertisement

ঘটনা ২: ভাতছালা থেকে মোটরবাইকে করে খোসবাগানে যাচ্ছিলেন নির্মল সাহানা। রাস্তা কাটা রয়েছে বুঝতে পারেননি। গর্তে চাকা ঢুকে উল্টে যায় মোটরবাইকটি। ভাঙা পা নিয়ে শয্যাশায়ী তিনি।

ঘটনা ৩: ছোট নীলপুর থেকে সাইকেলে করে রান্নার কাজ করতে যাচ্ছিলেন ছন্দা দাস। টোটো, স্কুলের গাড়িকে জায়গা ছাড়তে গিয়ে কাটা রাস্তার গর্তে সাইকেল নিয়ে উল্টে পড়েন। হাত-পা ছড়ে যায়। সাইকেল সারাতেও খরচ হয় বেশ খানিকটা।

Advertisement

টোটো চালক, মোটরবাইক থেকে সাইকেল আরোহী প্রত্যেকেরই দাবি, যে ভাবে রাস্তা কাটা হয়েছে, তা ভয়ঙ্কর। তার উপরে, বৃষ্টির জন্য চারি দিক কাদা হয়ে গিয়েছে। হাঁটাও দুষ্কর। কয়েক দিন আগে, পার্কাস রোডে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের প্রিজ়ন ভ্যানও গর্তে পড়ে গিয়েছিল। আগামী সোমবার বর্ধমানে আসার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রশ্ন উঠছে, তার আগে কি রাস্তার শ্রী ফিরবে? পুরসভার কাছে কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, ‘‘বর্ষায় সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, তা দেখা হচ্ছে। রাস্তার সমস্যা রয়েছে ঠিকই, তবে জল প্রকল্পের কাজটা হয়ে গেলে বর্ধমানের মানুষই উপকৃত হবেন। সবার সহযোগিতা চাইছি।’’

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র সরকারের ‘আম্রুত’ (অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফর্মেশন) প্রকল্প থেকে দামোদর নদের বালিতে সঞ্চিত জলকে আটকে তা বর্ধমান শহরের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা পুরসভার। সে কাজের জন্যই পাইপ লাইন বাসনোর কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। সে কাজ এখনও চলছে। কিন্তু পাইপ লাইন বসানোর কয়েক মাস পরেও, বেহাল রাস্তা সারানো হয় না বলে অভিযোগ। বাড়ে দুর্ভোগ।

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, নীলপুর, ইছলাবাদ, খোসবাগান, বেড়, নতুনগঞ্জ, আলমগঞ্জ, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়, হাসপাতালের রাস্তা, জিটি রোডের ধার, কাঁটাপুকুর, সর্বমঙ্গলাপাড়া, কালনা গেট, খালাসিপাড়া, তেঁতুলতলা বাজার-সহ বেশ কিছু রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। আবার কোনও কোনও জায়গায় কয়েক মাস ধরে রাস্তার সংস্কার হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দদের অভিযোগ, মাটি খুঁড়ে পাইপ বসানোর পরে, উঁচু করে মাটি চাপা দিয়ে ইটের টুকরো ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে, চলাফেরা করাটাই এখন ভার। শহরের বেশির ভাগ রাস্তা তুলনামূলকভাবে সরু। তার উপরে রাস্তার এই ‘হালে’ যানজট তীব্র হচ্ছে, দুর্ঘটনাও বাড়ছে অভিযোগ তাঁদের।

জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দারের অভিযোগ, ‘‘অপরিকল্পিত ভাবে পাইপ বসাতে গিয়ে শহরের রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য করে তুলেছে কে? প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।’’ পেশায় অস্থি চিকিৎসক, বিজেপি নেতা সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমার কাছে প্রতিদিনই বর্ধমানের রাস্তার গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, এমন রোগীরা আসেন। শহরের রাস্তাঘাটগুলিকে কোমায় পাঠিয়ে দিয়েছে পুরসভা।’’

পুরপ্রধান বলেন, ‘‘অম্রুত প্রকল্পের এজেন্সিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙা রাস্তা ঠিক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে, রাস্তা কেটে গর্ত বোজানোর কথাও বলা হয়েছে।’’ পুজোর আগে, শহরের রাস্তা ঝাঁ চকচকে করে দেওয়া হবে, আশ্বাস তাঁর। শহরবাসীর একাংশের অবশ্য দাবি, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement