সোমবার এ ভাবেই পাড় ভেঙেছে ভাগীরথী। নিজস্ব চিত্র
ভাঙন নিয়ে অভিযোগ বরাবরই ছিল। সোমবার ফের ধস নামায় আতঙ্ক বেড়েছে কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের চরসাহাপুরে। এ দিন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে ভাগীরথীর বাঁধে আচমকা বড়সড় ধস নামে। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিটার বাঁধের অংশ জলে তলিয়ে গিয়েছে, দাবি পঞ্চায়েতের। খবর পেয়েই এলাকায় যান সেচ দফতরের (কাটোয়া মহকুমা) সহকারী বাস্তুকার সোমনাথ ঘোষ। তড়িঘড়ি বালির বস্তা ও বাঁশের খাঁচা ফেলে ভাঙন আটকানোর কাজ শুরু হয়। বিপদ এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সারা রাত বাঁধ মেরামতের কাজ চালানোর জন্য আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার সেচ দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা চরসাহাপুর গ্রামে যাবেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে পরিস্থিতির পিছনে সেচ দফতরের ‘গাফিলতি’কেই দুষেছেন অগ্রদ্বীপ পঞ্চায়েতের প্রধান নিতাইসুন্দর মুখ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “টেন্ডারের পরে ওর্য়াক অর্ডার হওয়া সত্ত্বেও সেচ দফতরের কর্তাদের উদাসীনতার জন্যই বাঁধের ভাঙন আটকানোর কাজ শুরু হয়নি। এখন কি বালির বস্তা ফেলে ভাঙন আটকানো যায়! এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। রাত জেগে গ্রাম পাহারা দেবেন তাঁরা। পুরো বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেলে কাটোয়া ২ ব্লক-সহ জেলার কৃষি অঞ্চলের একটা বড় অংশ জলের তলায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চরসাহাপুর গ্রামে কয়েক বছর ধরেই পাড় ভাঙছে ভাগীরথী। গত দু’বছরে এলাকার কয়েক হাজার কৃষিজমি নদীতে চলে গিয়েছে। অপূর্বকুমার সেন, কার্তিক বিশ্বাসদের ক্ষোভ, “পাঁচ বছর ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। নদীর জল বাড়লে ভাঙনও বেশি হয়। কিন্তু সেচ দফতর কোনও স্থায়ী পদক্ষেপ করে না। আতঙ্কে আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে চরসাহাপুর থেকে মাখালতোড় গ্রাম পর্যন্ত ২৪০ মিটার ভাগীরথীর নদীবাঁধের সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে টেন্ডার হয়। এ বছরের মে মাসে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরুর কথা ছিল। সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার সোমনাথবাবু বলেন, “ওই গ্রামে ভাগীরথীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমরা খুবই চিন্তিত। ভাঙন রোধের জন্য বালির বস্তা ও বাঁশের খাঁচা ফেলা হচ্ছে। সারা রাত কাজ চলবে।’’ করোনা-পরিস্থিতির জন্য টেন্ডার ডেকেও কাজ শুরু করা যায়নি, দাবি তাঁর।