আদরে: কৃষ ও তৃষার অন্নপ্রাশনে। শুক্রবার দুর্গাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল হতেই সাজোসাজো রব। জোড়া অন্নপ্রাশন। সঙ্গে অবশ্য মনখারাপ, আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাদেই ওই দুই শিশুকে তুলে দিতে হবে চাইল্ডলাইনের হাতে। বাবা-মায়ের ফেলে যাওয়া ওই দুই শিশুকে গত ছ’মাস ধরে আগলে রেখেছিলেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর এক ব্যক্তি একটি শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। অভিযোগ, চিকিৎসকেরা শিশুটিকে পরীক্ষার করার সময়ে ফাঁক তালে পালিয়ে যান ভদ্রলোক। আদর করে চিকিৎসক ও নার্সরা এই শিশুটির নাম রাখেন কৃষ। তত দিনে, হাসপাতালে রয়েছে তৃষাও। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-র মাঝামাঝি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে চম্পট দেন মা। ওই শিশুটিরই নাম দেওয়া হয় তৃষা।
সেই সময় থেকেই দুই শিশু মানুষ হচ্ছিল হাসপালের চিকিৎসক, নার্স, আয়াদের কোলে-পীঠে। শুক্রবার হাসপাতাল চত্বরে কৃষ ও তৃষারই অন্নপ্রাশনের আসর বসেছিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাসপাতাল চত্বর সাজানো হয় রঙিন বেলুন আর ফুলে। সকাল থেকে শিশু দু’টিকে সাজানো হয় চন্দনের ফোঁটা ও রজনীগন্ধার মালায়। গায়ে চাপে নতুন জামা-কাপড়। দু’জনের জন্য পাতে রাখা হয় মিষ্টি, পায়েস, মাছের নানা পদ, পোস্তর বড়া। নার্সরা নিজেরাই ভোরে উঠে দু’জনের জন্য পায়েস রান্না করেছিলেন। অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ বহন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই।
দু’জনকে এক সঙ্গে কোলে বসিয়ে মুখে ভাত খাইয়েছেন হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস। তার সঙ্গে সঙ্গত দিয়েছে নার্স, আয়া আর মহিলা চিকিৎসকদের দেওয়া উলুধ্বনি। আজ, শনিবার তাদের তুলে দেওয়া হবে চাইল্ড লাইনের হাতে। আর তাতেই মনখারাপ সকলের। চিকিৎসক সুদেষ্ণা মণ্ডল বলেন, ‘‘ওরা দু’জনেই এ বার বর্ধমানের হোমে চলে যাবে। এই ছ’মাসে কেমন যেন মায়া পড়ে গিয়েছিল। খুব মনখারাপ।’’ নার্স শুক্লা চন্দও বলেন, ‘‘কেউ বাড়ি ছেড়ে গেলে যেমন মনখারাপ হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হচ্ছে।’’