অবসর কীসের, পড়ানোর ফাঁকে বলছেন বৃদ্ধ শিক্ষক

‘শিক্ষকের কোনও অবসর হয় না’— চাকরি জীবনের প্রথম থেকে এটাই মাথায় গেঁথে গিয়েছিল সাদামাটা শিক্ষকের। তাই প্রথাগত অবসর নেওয়ার পরেও কাজ শেষ হয়নি তাঁর। এখনও নিয়মিত স্কুলে এসে পড়েন কাটোয়ার রাজমহিষীদেবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
Share:

বই হাতে চিত্তরঞ্জনবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

‘শিক্ষকের কোনও অবসর হয় না’— চাকরি জীবনের প্রথম থেকে এটাই মাথায় গেঁথে গিয়েছিল সাদামাটা শিক্ষকের। তাই প্রথাগত অবসর নেওয়ার পরেও কাজ শেষ হয়নি তাঁর। এখনও নিয়মিত স্কুলে এসে পড়েন কাটোয়ার রাজমহিষীদেবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস।

Advertisement

আদি বাড়ি নবদ্বীপ হলেও গত বিশ বছর ধরে কাটোয়ার মাধবীতলার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন চিত্তরঞ্জনবাবু। কাটোয়ার কাছে কোশিগ্রাম স্কুলে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করার পরে বছর পাঁচেক আগে রাজমহিষী স্কুলে আসেন তিনি। স্কুলে ঢোকার কিছুদিনের মধ্যেই পড়ুয়াদের প্রিয় হয়ে ওঠেন ‘চিত্ত স্যার’। গত জুলাইয়ে অবসর নিয়েছেন তিনি। তারপরেও থামেনি বিদ্যাচর্চা। এখনও ফি দিন সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই ধুতি পরে ব্যাগ কাঁধে পৌঁছে যান স্কুলে। বিনা পারিশ্রমিকেই নিয়মিত ছাত্রদের পড়ান তিনি। স্কুলের সহকর্মী শিক্ষক বাবুল চৌধুরী জানান, ‘‘উনি বরাবরই নিয়মানুবর্তী। কখনও ৫ মিনিটও দেরি হয় না স্কুলে ঢুকতে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘শিক্ষক দিবসে আমরা ওনাকে সম্মানিত করব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু উনি তো পুরস্কার নিতে আসতেও রাজি নন।’’ জানা যায়, শিক্ষকদের অবসর হয় না, এই ভাবনা থেকে অবসরের দিনে স্কুলে আসেননি চিত্তবাবু, যদিও ছাত্রছাত্রীরা ভোলেনি তাঁকে। ওই দিন স্কুলে একটা পাখা দান করেন তিনি।

চিত্ত স্যার না এলে যেন ক্লাসে মন বসে না খুদেদের। চতুর্থ শ্রেণির সুরজিৎ রায়, সুস্মিতা মহলাদার, তৃতীয় শ্রেণির রানা দেবনাথদের কথায়, ‘‘স্যার এখনও রোজ স্কুলে এসে পড়ান। উনি বোঝালে যে কোনও কঠিন পড়াও সহজে বুঝতে পারি।’’ ছাত্রছাত্রীদের এত আবেগ, ভালোবাসা ফেলে কি যাওয়া যায়! চিত্তরঞ্জনবাবু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতদিন বাঁচবেন এই স্কুলেই বিনা বেতনে পড়াবেন। পাশে দাঁড়িয়ে গর্বিত স্ত্রী রিতা বিশ্বাসও বলেন, ‘‘উনি স্কুলকে সন্তানের মতো ভালবাসেন। একটা দিনও স্কুল ছাড়া থাকতে পারেন না। ছুটির দিনও ছটফট করেন।’’ যদিও চিত্তরঞ্জনবাবুর কথায়, এ আর এমন কী। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে তাঁর জবাব, ‘‘বিদ্যা দান পুণ্যের কাজ। তাই আজীবন এই কাজের সাথেই যুক্ত থাকতে চাই।’’ পরে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি অনাথ আশ্রম খোলারও ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement