মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। Sourced by the ABP
ছ’বছর আগে কালনা ও শান্তিপুরের মধ্যে সেতু গড়ার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও জটে আটকে সেই সেতুর পুরো জমি কেনা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেটে পূর্ব বর্ধমানে আরও একটি সেতু গড়ার কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
দামোদরের কৃষক সেতুর পাশে, পূর্ব দিকে সাত নম্বর রাজ্য সড়কের বর্ধমান-আরামবাগ রোডের উপরে ২৪৬ কোটি টাকা খরচে নতুন ‘শিল্প-সেতু’ গড়ে উঠবে বলেও রাজ্য বাজেটে জানানো হয়েছে। তিন বছরের মধ্যে ৬৪০ মিটার লম্বা সেতুটি তৈরি হবে। প্রথম বছরের কাজর জন্য মিলবে ১০০ কোটি টাকা। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন সেতুর জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ বা কিনতে হবে না। এমনকি, সংযোগকারী রাস্তার জন্যও পর্যাপ্ত জমি নদীর দু’পাড়ে রয়েছে। ওই সেতুর আগে ইডেন ক্যানেলের উপরে আরও একটি সেতু তৈরিরও উদ্যোগ করা হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা হল বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়ক। বর্ধমানের সঙ্গে বাঁকুড়া, হুগলির যোগাযোগ ছাড়াও দুই মেদিনীপুরের গাড়ির যাতায়াত রয়েছে। বর্ধমান শহরের সঙ্গে রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ ও জামালপুরের একাংশের যোগাযোগের মূল মাধ্যমও ওই রাস্তা। ১৯৭৮ সালে কৃষক সেতু চালু হয়। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, সেতু তৈরির সময় দিনে আড়াই হাজারের মতো গাড়ি চলত। এখন সেখানে দিনে ভারী যান-সহ ২৭ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। যানজটও নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধিকারিকদের দাবি, যানজটের জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে ভারী যান দাঁড়িয়ে থাকায় সেতুর ক্ষতি হচ্ছে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “যে কোনও সেতুরই পূর্ণ মেয়াদ ধরা হয় ৫০ বছর। সেই হিসেবে কৃষক সেতুর বয়স ৪৬। ফলে এখন থেকেই পরিকল্পনা করা উচিত।’’
পূর্ত দফতরের দাবি, গত ৩১ জুলাই প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পড়ে। তার নানা ব্যাখা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় জেলায়। তারপরে অর্থ দফতরের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃষক সেতুর পাশে শিল্প-সেতু ও ইডেন ক্যানালের উপরে আরও একটি সেতুর জন্য ৩৫০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়। তবে এ দিন বিধানসভায় শুধু কৃষক সেতুর পাশের নতুন সেতুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দু’বছর আগে কৃষক সেতুর পূর্ব দিকে নিজেদের জমিতই বর্ধমান-আরামবাগ রোডের উপর নতুন সেতু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্ত দফতর। পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন সেতু কোথায় হবে, তা সরেজমিন দেখে যান পূর্ত সচিব অন্তরা আচার্য।
জানা যায়, বর্ধমানের তেলিপুকুর থেকে বাঁকুড়া মোড় পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা চার লেনের করা হবে। দু’লেনের কৃষক সেতুর পূর্ব দিকে আরও একটি তিন লেনের সেতু হবে। চারটে স্তম্ভের উপর সেতুটি তৈরি হবে। ফুটপাথ থাকবে। ইডেন ক্যানেলের পাশেও ৮০ মিটার লম্বা দু’লেনের সেতু তৈরির উদ্যোগ করা হয়েছে। একমাত্র নদীর উত্তর পাশে বেশ কিছু দখলদার রয়েছে, তাঁদের অন্যত্র সরাতে হবে বলে পূর্ত দফতর মনে করছে। বিধায়ক (রায়না) শম্পা ধাড়া বলেন, “আমাদের এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেটাতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি নিজেও বিধানসভায় দাবি করেছি।” এলাকার বাসিন্দাদের আশা, সেতু তৈরি হলে গতি বাড়বে, যানজট কমবে। রাস্তার দু’ধারে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যাবে। তবে বিজেপির নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী তো কত কিছুই ঘোষণা করেন! তার কতটা বাস্তবে হবে সেটাই প্রশ্ন। ভোটের মুখে এই ধরনের ঘোষণায় মানুষের দৈনন্দিন যন্ত্রণা কমবে বলে মনে হয় না।’’