রোহিত মজুমদার (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) ও তাঁর সঙ্গীরা। ছবি: অভিযাত্রীদের সৌজন্যে
আরও একটি পর্বত শৃঙ্গ জয় করে ফিরলেন কাঁকসার পানাগড়ের বাসিন্দা রোহিত মজুমদার। সম্প্রতি তিনি হিমাচলপ্রদেশের শিনকুন পর্বত আরোহণ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন। অভিযানে গিয়ে বেশ কয়েকবার তাঁদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। অবশেষে প্রায় ৬,১২৭ মিটার উচ্চতার এই পর্বত জয় করে খুশি রোহিত ওতাঁর সঙ্গীরা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় ব্যবসায়ী রোহিত ছাত্রাবস্থা থেকেই পাহাড়ে চড়ার স্বপ্ন দেখতেন। রোহিত জানান, পাহাড়ে ওঠার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে, উত্তরাখণ্ডের ‘উত্তরকাশীর নেহরু মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে অ্যাডভান্স কোর্স করেন। ২০১৫ ও ২০১৭-য় যথাক্রমে সালে কাশ্মীরের ‘মাউন্ট নুন’ ও উত্তরাখণ্ডের ‘ব্ল্যাক পিক’ জয় করেন। রোহিতের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এ বছর কলকাতার ‘ওয়ান্ডার্স অ্যান্ড এক্সপ্লোরার্স’ ক্লাবের তরফে তিনি ‘টিম লিডার’ হিসেবে পর্বত আরোহণে যান। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার আগরপাড়ার পৌলস্ত্য সেনগুপ্ত, বারাসতের রাজকুমার ওঁরাও, শিলিগুড়ির সৌমিতা সাহা। প্রথম জন লোকোপাইলট। বাকি দু’জন শিক্ষকতা করেন।
রোহিত জানান, তিনি ছাড়া বাকিদের এই প্রথম পর্বত আরোহণ। কাজেই তাঁর উপরেই গুরুদায়িত্ব পড়েছিল। অভিযানে বেরিয়ে বার বার তাঁদের প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। ১০ অগস্ট তাঁরা দু’জন শেরপা পেমবা শেরিং ও অনুপ রাইকে নিয়ে বেসক্যাম্পে পৌঁছন। পাহাড়ের উচ্চতার সঙ্গে নিজেকে মানাতে না পারায় সৌমিতা বেসক্যাম্পেই থেকে যান। ১১ অগস্ট ক্যাম্প ১-এ সামগ্রী সব রেখে এসে ফিরে আসেন। আবহাওয়া পরিষ্কার হতেই ১৩ অগস্ট তাঁরা ক্যাম্প ১-এ পৌঁছন। যার উচ্চতা প্রায় ৫,৩২০ মিটার। পরের দিন, ১৪ তারিখ ক্যাম্প ২-এ যান। কিন্তু দ্রুত আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায়, ক্যাম্প ১-এ নেমে আসতে হয় তাঁদের। ১৫ ও ১৬ অগস্ট চলে বর্জ্যপাত, তুষারপাতও। ১৭ অগস্ট দুপুর থেকে আবহাওয়া কিছুটা পরিষ্কার হওয়ায় দু’জন শেরপাকে নিয়ে রোহিত-সহ তিন জন ক্যাম্প ২-এর দিকে রওনা দেন। রোহিত বলেন, “এ রকম আবহাওয়া সব সময় পাওয়া যাবে না। তাই ওই রাতেই আমরা পর্বত জয়ের উদ্দেশ্যে বার হওয়ারপরিকল্পনা করি।।”
রোহিত জানান, ১৭ অগস্ট রাত ১১টা নাগাদ শুরু হয় পর্বতারোহণ। চলার পথে মাঝেমধ্যেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল বিপজ্জনক বরফের হাম্প। সঙ্গে রয়েছে বড় বড় ফাটল। অবশেষে ১৮ অগস্ট সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁরা ‘পশ্চিম শিনকুন’ শৃঙ্গে পৌঁছন। রোহিত বলেন, “আমি আগেও অনেক শৃঙ্গ জয় করেছি। তবে এ বার প্রথম দু’জনকে নিয়ে গেলাম, যাঁদের প্রথম শৃঙ্গ জয়। উপরে প্রায় আধ ঘণ্টা ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ পৌঁছে যাই বেসক্যাম্পে।” রোহিত ও তাঁর সঙ্গীদের প্রতিক্রিয়া, “পর্বত শৃঙ্গ জয় করতে গেলে পদে পদে থাকে বিপদ। সেই বিপদকে পাশ কাটিয়েই শৃঙ্গ জয় করার আনন্দই আলাদা।”