পুলিশ জাগতেই লম্বা লাইন বুথে

এক দিনের ব্যবধানে অন্য রকম ভোট দেখল কাটোয়ার বাসিন্দারা। শনিবারের পুরভোটে হিংসা ছড়িয়েছিল কাটোয়ায়। সে দিন বোমা-গুলির দাপট দেখেছিল কাটোয়া। বুথ ‘দখল’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। ভোট সংঘর্ষে মারা গিয়েছিলেন এক জন। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ সক্রিয় না থাকায় শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শহর কাঁপিয়েছে। সোমবার অবশ্য ছবিটা অনেকটাই বদলায়। এ দিন পুরসভার ৮টি বুথের পুর্ননির্বাচন মোটের উপর শান্তিতেই মিটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৩
Share:

আগের দিনের বোমা-গুলি আতঙ্ক নিয়েও ভোটারদের লাইন কাটোয়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে।

এক দিনের ব্যবধানে অন্য রকম ভোট দেখল কাটোয়ার বাসিন্দারা। শনিবারের পুরভোটে হিংসা ছড়িয়েছিল কাটোয়ায়। সে দিন বোমা-গুলির দাপট দেখেছিল কাটোয়া। বুথ ‘দখল’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। ভোট সংঘর্ষে মারা গিয়েছিলেন এক জন। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ সক্রিয় না থাকায় শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শহর কাঁপিয়েছে। সোমবার অবশ্য ছবিটা অনেকটাই বদলায়। এ দিন পুরসভার ৮টি বুথের পুর্ননির্বাচন মোটের উপর শান্তিতেই মিটেছে।

Advertisement

শনিবার কাটোয়া পুরসভার ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কাটোয়ার পঞ্চবটি পাড়ার যুবক, তৃণমূল কর্মী ইন্দ্রজিৎ সিংহ। অভিযোগ ওঠে, কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই খুনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এরপরেই উত্যপ্ত হয়ে ওঠে গোটা শহর। শাসক দলের বিরুদ্ধে বোমা-গুলি নিয়ে বুথ দখলের অভিযোগ করে বিরোধীরা। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুথ দখলকে কেন্দ্র করে ৫টি ওয়ার্ডের ৮টি বুথে ইভিএম ভাঙা হয়। এই মর্মে প্রিসাইডিং অফিসাররা কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ৮টি বুথেই এ দিন পুনর্নির্বাচন হয়।

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকালের দিকে ভোটদানের হার কম ছিল। যাঁরা ভোট দিতে আসছিলেন তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট। তবে বুথে পুলিশের উপস্থিতি যথেষ্ট পরিমাণে থাকার খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর বেলা বাড়তে ভোটারেরা বুথে আসতে শুরু করেন। এ দিন সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে (৫১.২৬)। অন্য দিকে, সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে (৮০.১৯)। বিভিন্ন বুথে গিয়ে দেখা গিয়েছে, একজন ডিএসপি, একজন এসআই, ২ জন এএসআই-সহ প্রায় ৫০ জন পুলিশ প্রতিটি বুথ ঘিরে রেখেছে। বুথে ঢোকার মুখে ভোটের পরিচয়পত্র দেখছেন পুলিশ কর্মীরা। বুথের পাশ দিয়ে গেলেই পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Advertisement

ভোট চলাকালীন মোটরবাইক, গাড়িতে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় পুলিশকেও।

শুধু বুথগুলিতেই নয়, সোমবার গোটা শহরেই পুলিশি তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। সকাল থেকেই ২৫-৩০টি মোটরবাইক নিয়ে শহরে টহল দিয়েছে র‍্যাফ। হুড খোলা জিপে করে এলাকায় টহল দিয়েছে পুলিশ। এ দিন সকাল থেকে পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল কাটোয়া থানায় বসে ভোটের নিরাপত্তা দেখভাল করেছেন। সারাদিন শহর জুড়ে টহল দিয়েছেন বর্ধমান সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার, গ্রামীণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত চৌধুরী-সহ একাধিক পুলিশ কর্তা। গত শনিবার ভোট দিতে পারেননি এমন অনেক ভোটার এ দিন ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে বেরিয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজনের দাবি, “সোমবার যে ভাবে ভোট হল, শনিবারও এ ভাবেই তো ভোট হওয়া উচিত ছিল।”

সোমবার সকাল থেকেই কাটোয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি, মোটরবাইক থামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

তবে এর মধ্যেও কাটোয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের সঙ্গে পুলিশের বচসা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকালে ওই ওয়ার্ডের ভেটেরা পাড়ার একজন ভোটারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রচুর লোক জড়ো করেছে তৃণমূল। তখন পুলিশ তাঁদের সরে যেতে বললে বচসা শুরু হয়ে যায়। পরে বর্ধমান সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুর্ননির্বাচনে প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছিল, শনিবার তার অর্ধেক ব্যবস্থা থাকলেই ভোট লুঠ আটকানো যেত।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “পুলিশের আজকের সক্রিয়তা দেখে বোঝা যাচ্ছে শনিবার তাঁরা ইচ্ছে করেই কাজ করেনি।’’ যদিও শনিবার পুলিশ মোটের উপর সক্রিয় ছিল বলেই দাবি করেছেন তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রাম। তাঁর দাবি, ‘‘শান্তিতে ভোট হয়েছে। মানুষ অবাধে ভোট দিয়েছেন। আমরা কাটোয়াতে পুরবোর্ড গঠন করতে চলেছি বলেই মনে করছি।”

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement