কাটোয়া আদালত চত্বরে বাবার সঙ্গে রেণু খাতুন। নিজস্ব চিত্র।
ঘুমের মাঝে ডান হাতের কব্জি কেটে নিয়েছিলেন স্বামী। ২০২২ সালের ৪ জুন রাতেই সেই ঘটনা এখনও দগদগে মেয়েটার। কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামের রেণু খাতুনের অভিযোগ ছিল, নার্সিংয়ের সরকারি চাকরি পাওয়ার পরে তিনি স্বামীকে ছেড়ে যেতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই তাঁর ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়া হয়। পরে ওই মামলায় খুনের চেষ্টার ধারা বাতিল করে আদালত। বৃহস্পতিবার থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে ওই মামলার। শুক্রবার সাক্ষ্য দিতে কাটোয়া আদালতে আসেন রেণু। তিনি বলেন, ‘‘সত্যের জয় হবেই।’’
ওই ঘটনার পরে দীর্ঘ দিন হাসপাতালে ছিলেন রেণু। মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্যে কৃত্রিম হাত লাগানো হয়। বর্তমানে বর্ধমানে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণের কাজ করছেন তিনি। অভিযোগ ছিল, তিন সঙ্গীকে নিয়ে স্বামী সরিফুল শেখ ওই রাতে হামলা চালান। রাতেই তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাত জোড়া লাগেনি। ঘটনার একদিন পরে পুলিশ সরিফুল, চাঁদ শেখ, আশরফ আলি শেখ ও হাবিবুর রহমান-সহ মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সরিফুল-ছাড়া প্রত্যেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। রেণু বলেন, “ওই দিনের রাতের কথা আজও টাটকা হয়ে রয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসে যে আমার হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে, তা আজও ভাবতে কষ্ট হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চাকরি করছি। শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। বিচারকের সামনে বিরোধী আইনজীবীর যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। বিচার পাবই, এই বিশ্বাস আমার রয়েছে।’’
ঘটনার দিন উদ্ধার হওয়ার নানা অস্ত্র, রক্তমাখা পোশাক, বিছানার চাদর এ দিন আদালতে নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ আমার মক্কেলকে খুনের চেষ্টার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল। বিচারক অনেক আগেই তা খারিজ করে দিয়েছেন। ওই মহিলার স্বামী ছাড়া প্রত্যেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছে। এখন সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব চলছে। ওই মহিলার কথায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। বিচারকের কাছে আমরা উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ তুলে ধরছি।’’ রেণুর আইনজীবী তাপস মুখ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “আমার মক্কেলকে উপযুক্ত আইনি সাহায্য করা হচ্ছে। প্রত্যেকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সত্যি সামনে আসবে।’’
মেয়ের সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক। তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে ওরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল। নৃশংস ভাবে হাতের কব্জি কেটে নেয়। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে।’’