প্রতীকী ছবি।
পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের হিসাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ৪৯৫ জন করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে ৪৭৫ জনের পরিবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও রাজ্য সরকার জেলায় রিপোর্ট পাঠিয়েছিল, পূর্ব বর্ধমানের ২০৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সে তালিকা ধরে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ক্ষতিপূরণের ৫০ হাজার টাকা আবেদনকারীদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিল জেলা প্রশাসন। যদিও রাজ্য সরকারের পাঠানো তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের কী হবে— এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুপ্রিয় অধিকারী বলেন, “প্রত্যেকের আবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আবেদন করার পরে, তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের আধিকারিক ও কর্মীরা কার্যত বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশের পরেই রাজ্য সরকার তরফে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে ক্ষতিপূরণ দিতে মৃতদের পরিবারের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে।
জেলা প্রশাসন একেবারে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রচার করে। গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা সংশ্লিষ্ট বিডিও এবং পুর-এলাকার বাসিন্দারা মহকুমা শাসকের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়ে মৃতের ‘উত্তরসূরি’ হিসেবে আবেদন করেন। মৃতের ‘উত্তরসূরি’ বলে আদালতের হলফনামাও জমা দিতে হয় আবেদনকারীকে।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা যায়, আবেদনের সঙ্গে ‘হলফনামা’ দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়ানের অসঙ্গতির জন্য বেশ কয়েকটি পরিবারের ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি হয়েছে। আবেদন পাওয়ার পরেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সিএমওএইচ আবেদনকারীর তথ্য সঠিক বলে জানালে, তবেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সূত্রের খবর, এই ক্ষতিপূরণের আবেদন নিতে গিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর দেখে, জেলা বা রাজ্য সরকারের দেওয়া কোভিডের মৃত্যুর তালিকায় অনেকেরই নাম নেই। অথচ, আইসিএমআর-এর ওয়েবসাইটের মৃতের তালিকায় সে সব ব্যক্তির নাম রয়েছে। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, তালিকায় নাম রয়েছে অথচ, আইসিএমআর-এর ওয়েবসাইটে মৃতের তালিকায় তাঁদের নাম নেই। আইসিএমআর-এর ওয়েবসাইটে মৃতের তালিকায় নাম নেই এমন ৫৯ জনের পরিবার আবেদন করেছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য)-র নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে আবেদনগুলি ফের খতিয়ে দেখতে বলেছে। ওই কমিটির দাবি, আবেদনকারী নিয়ম মেনে মৃতের সব তথ্য ও নথি জমা করেছেন। শুধু আইসিএমআর-এর ওয়েবসাইটে নাম নেই বলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তালিকায় নাম না থাকলেও নির্দিষ্ট নথি ও তথ্য দিয়ে আবেদন করলে কাউকে ফেরানো যাবে না। ওই আবেদন পাওয়ার পরে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করব।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যে রাজ্যের কাছে এ দিনই আরও দেড় কোটি টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ওই টাকা আসার আগেই বিপর্যয় মোকাবিল দফতর বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে রাখতে চাইছে। তা হলে টাকা এলেই আবেদনকারীদের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেওয়া যাবে।